পদবিন্যাস

পদবিন্যাস , পদবিন্যাসের নিয়ম, বাক্য প্রকরণ

পদবিন্যাস, বাংলা পদবিন্যাস, বাক্য প্রকরণ, বাক্য প্রকরণ কিভাবে করা হয়? বাক্য গঠনের নিয়ম, বাক্য গঠন করার বৈশিষ্ট্য

বাক্য গঠনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক ভাষারই কতকগুলি নিজস্ব বৈশিষ্ট্য থাকে। এই বৈশিষ্ট্য বা বিশেষ রীতিগুলি মানিয়া না চলিলে বাক্য অর্থহীন হইয়া দীড়ায়। বাক্যের মধ্যে কর্তা, কর্ম, ক্রিয়া প্রভৃতির বিশেষ স্থান নির্দিষ্ট আছে। এই নিয়মের ব্যতিক্রম হইলে ভাষায় বিভ্রাট দেখা যায়। পৃথিবীর অন্যান্য ভাষার মত বাংলাভাযাতেও পদবিন্যাসের কতকগুলি বিশেষ রীতি আছে। সংস্কৃত প্রভৃতি প্রাচীন ভাষার ব্যাকরণে রূপতত্তরের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু ইংরেজী, বাংলা প্রভৃতি আধুনিক ভাষার ব্যাকরণে পদতত্তের গুরুত্ব বেশী। আধুনিক ভাষায় ইডিয়মের প্রাচুর্যে ভাব প্রকাশের শক্তি খুব বাড়িতেছে।

বাংলা পদবিন্যাসের নিয়ম আলোচনা করা হইল-

(১) কোন বাক্যে যদি কেবল কর্তা ও সমাপিকা ক্রিয়া থাকে তবে প্রথমে কর্তা এবং পরে সমাপিকা ক্রিয়া বসে। যথা, ছেলেটি হাসিতেছে।

(২) সমাপিকা ক্রিয়াটি যদি দ্বিকর্মক হয়, তবে কর্তা ও ক্রিয়ার মাঝখানে কর্মটি বসিবে। যথা,
ছেলেটি বই পড়িতেছে।

(৩) সমাপিকা ক্রিয়াটি যদি সকর্মক হয়, তাহা হইলে প্রথমে গৌণকর্ম ও পরে মুখ্যকর্ম বসে।
যথা, শিক্ষক ছেলেটিকে ব্যাকরণ পড়াইতেছেন। এই বাক্য প্রথমে কর্তা “শিক্ষক, সর্বশেষে সমাপিকা ক্রিয়া ‘পড়াইতেছেন’ মধ্যে প্রথমে ‘গৌণকর্ম ‘ছেলেটিকে! এবং পরে মুখ্যকর্ম ‘ব্যাকরণ’ রহিয়াছে।

(৪)করণ, অধিকরণ, আপাদান প্রভৃতি কারক সাধারণতঃ-  সমাপিকা ক্রিয়ার পূর্বে বসিয়া থাকে। যথা, সে বাগানে লাঠি দিয়া আম পাড়িতেছে। এখানে অধিকরণ কারক ‘বাগানে’ এবং করণ কারক ‘লাঠি দিয়া’ সমাপিকা ক্রিয়ার পূর্বে বসিয়াছে।

উপরে পদবিন্যাস রীতির যে সাধারণ নিয়মগুলির কথা বলা হইল কখনও কখনও তাহার ব্যতিক্রম দেখা যায়। যথা-

(ক) বক্তার ইচ্ছানুযায়ী অথবা কোন বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করিবার জন্য অনেক সময় পদসমূহের স্থানচ্যুতি ঘটে, ‘এলেন রাজা, এলেন মন্ত্রী, বসল তাদের মন্ত্রণা সভা*। এখানে ক্রিয়াপদ ‘এলেন’ ও ‘বসল’ কর্তার পূর্বেই বসিয়াছে।

(খ) কবিতায় অনেক সময়ই ক্রিয়াপদপ্রথমে বসে। অন্যপদও স্থান পরিবর্তন করে। যেমন,
‘কহিলাম আমি, তুমি ভূস্বামী, ভূমির অন্ত নাই’

(গ) বাংলায় কখনও কখনও করণ, অধিকরণ ও অপাদান কারক প্রভৃতি সমাপিকা ক্রিয়ার পরে বসিয়া থাকে। যেমন, ‘বইটা নিয়ে এসোনা ঘর থেকে’, ‘তুমি এক্ষুণি চলে যাও কলকাতায়।’

এখানে ‘ঘর থেকে’ এই অপাদান কারকটি ‘এসোনা’ ক্রিয়ার পরে বসিয়াছে। দ্বিতীয় উদাহরণে অধিকরণ কারক ‘কলকাতায়’ চলে যাও’ ক্রিয়ার’ পরে বসিয়াছে।

(ঘ) বাংলা ভাষায় সম্বন্ধ পদ সাধারণতঃ- যাহার সহিত সম্বন্ধ তাহার পূর্বেই বসিয়া থাকে। কখনও কখনও ইহার ব্যতিক্রমও দেখা যায়। যথা, ‘তোমার বইটা আন’ ‘ঘড়িটা আমার যে কোথায় পড়ল’। প্রথম বাক্য ‘তোমার’ সম্বন্ধ পদটি বইটার পূর্বে বসিয়াছে। কিন্তু দ্বিতীয় পদটিতে ‘আমার’
সম্বন্ধ পদটি ‘ঘড়িটার’ পরে বসিয়াছে।

(ঙ) নিষেধার্থক ‘না অব্যয়টি বাংলায় সব সময়েই ক্রিয়ার পরে বসে। যেমন, ‘আমি খাইবনা’। তুমি কি কাজটি করিতে যাইবেনা’? কিন্তু উপাদান বাক্য বা সাপেক্ষ বাক্যে, কবিতায় এবং জোর বুঝাইবার জন্য ইহার ব্যতিক্রম দেখা যায়। যথা-‘না চাহিতে যারে পাওয়া যায়’ (কবিতা)। তুমি না গেলে
আমিও যাব না (উপাদান বাক্য)। ‘না গেলে আমার চলবে না (জোর বুঝাইবার জন্য)।

(চ) বাংলা ভাষায় উপাদান বা সাপেক্ষ বাক্য সাধারণতঃ মূল বা প্রধান বাক্যের পূর্বে বসিয়া
থাকে। ‘যে সত্য কথা বলে, সকলে তাহাকে বিশ্বাস করে। এখানে ‘সে সত্য কথা বলে, এই উপাদান বাক্য প্রধান বাক্যের ‘সকলে তাহাকে বিশ্বাস করে’ পূর্বে বসিয়াছে।

(ছ) বাংলা ভাষায় পরোক্ষ উক্তিতে সাধারণতঃ মূল ক্রিয়ার অনুযায়ী কালসংগতি রক্ষার প্রয়োজন হয় না। যথা, এরপর আমি লেঠেলদের জিজ্ঞেস করলুম, তারা ঈশ্বরকে খেলবার অনুমতি দেবে কিনা? এখানে মূল ক্রিয়া ‘জিজ্ঞেস করলুম’ অতীত কাল হইলেও পরোক্ষ উক্তির ‘দেবে কিনা’ক্রিয়াটি ভবিষ্যৎ
কালেই রহিয়া গেল।

(জ) বাংলা ভাষায় প্রতি বাক্যে অবশ্যেই উদ্দেশ্য ও বিধেয় বর্তমান থাকিবে ইহাই নিয়ম। কিন্ত বহুস্থলেই ইহাদের কোন না কোন একটি উহ্য থাকে।

ওখানে কে’?
‘আমি’।
কিংবা ”তুমি কি যাইবে?”
না’।

প্রথম বাক্যে ‘আমি’র পর ‘এখানে আছি’ এই বিধেয় অংশটি এবং দ্বিতীয় বাক্যে ‘না’ এর পূর্বে ‘আমি’ এই উদ্দেশ্য এবং ‘যাইব’ এই বিধেয় অংশ উহা আছে।

আরোও পড়ুন

Bengali Idiom

error: Content is protected !!