বড়ো কে

বড়ো কে পাঠের প্রশ্ন উত্তর, Class 5 Bengali

বড়ো কে, পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা পাঠ- ১৪ প্রশ্ন উত্তর  Class 5 Bengali,  Bengali Question Answer Class V. SCERT Assam. Ankuran Class V.

কবিতাটি শুদ্ধ উচ্চারণে পড়ো এবং আবৃত্তি করো।

বড়ো কে

আপনারে বড়ো বলে, বড়ো সেই নয়
লোকে যারে বড়ো বলে, বড়ো সেই হয়।

বড়ো হওয়া সংসারেতে কঠিন ব্যাপার
সংসারে সে বড়ো হয়, বড়ো গুণ যার৷

গুণেতে হইলে বড়ো, বড়ো বলে সবে
বড়ো যদি হতে চাও,  ছোটো হও তবে৷

কবি- হরিশ্চন্দ্র মিত্র

ক- পাঠভিত্তিক

উত্তর লেখো –

(ক) এই কবিতার কবির নাম কি?
উত্তরঃ- এই কবিতার কবির নাম – হরিশ্চন্দ্র মিত্র।

(খ) কবির মতে বড়ো কে?
উত্তরঃ- যে সংসারে নিজেকে ছোটো ভাবে কবির মতে সেই বড়ো।

(গ) বড়ো কাদের বলা হয়?
উত্তরঃ- উচ্চতায় নয়,  যিনি বিভিন্ন গুণসম্পন্ন, ধৈর্যশীল, সহানুভূতি সম্পন্ন এবং নিরহংকারী তাকেই বড়ো বলা হয়৷

(ঘ) কীসে বড়ো হলে সংসারেতে বড়ো হওয়া যায়?
উত্তরঃ- গুণে বড়ো হলে সংসারেতে বড়ো হওয়া যায়।

(ঙ) বড়ো হতে গেলে কী করতে হবে?
উত্তরঃ- বড়ো হতে গেলে নিজেকে আগে ছোটো ভাবতে হবে।

বড়ো কে পাঠের প্রশ্ন উত্তর,

কবি কেন সংসারে বড়ো হওয়া কঠিন বলিয়াছেন?
উত্তরঃ- পরের কাছে প্রশসো লাভের জন্য, বড়ো সাজার নেশায় মানুষ কি না করে। কিন্তু তার সেই আচরণের মধ্যে ক্ষুদ্রতা বাসা বেঁধে থাকে। মানুষ যখন অন্তরের টানে, বিবেকের তাড়নায় মনুষ্যত্বের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে তখনই সে প্রকৃত বৃহৎ হয়।

মানুষ কাজ করে। সেই কাজের পরিণাম বহু ক্ষেতে হাতে-নাতে পেতে চায়। স্বার্থপর, আত্মকেন্দ্রিক মানুষ যেমন নিজের ভোগ ঐশ্বর্যের মধ্যে পরম তৃপ্তি খুঁজে ফেরে তেমনি মহত্মের ভান করা কিছু মানুষ অন্যের বিপদ মুক্তি ঘটিয়ে, আর্থিক সমস্যার সমাধান করে অথবা ক্ষুন্নিবৃত্তি  মিটিয়ে মানব সমাজের কাছে বাহবা পেতে চায়৷ তারা প্রয়োজনে পরোপকারের ব্যাপারটি প্রচারের আলোকে এনে পাঁচজনের প্রশংসা কুড়োতে ব্যস্ত থাকে। বড়ো প্রতিভার বৈশিষ্ট্যই হল নিজেদের নিঃশেষ করেই তারা আনন্দ লাভ করেন। পরকে পূর্ণ করে নিঃশব্দে অন্তরালে আত্মগোপন করাকে তারা গৌরবের বলে মনে করেন।

কবিতার পংক্তিগুলো বুঝিয়ে লেখো।

(ক) আপনারে বড়ো বলে, বড়ো সেই নয়
লোকে যাকে বড়ো বলে, বড়ো সেই হয়।
উত্তরঃ- পৃথিবীকে সুন্দর ও অসুন্দর করে গড়ে তোলার বাসনা মানুষের মধ্যেই নিহিত। মানুষ শুভ ও কল্যাণকর প্রচেষ্টা দিয়ে পৃথিবীকে যেমন স্বর্গে পরিণত করতে পারে ৷ স্বর্গ-নরক, সুর-অসুরের ধারণাগুলো এসেছে মানুষের ভালো-মন্দ কাজের প্রতিক্রিয়াতে।

প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই দৈবভাব ও দানবভাব লুকিয়ে আছে। যখন সে সৎকর্ম, সৎচিন্তা ও সৎজীবনে আগ্রহী হয় তখন সে স্বর্গসুখ পায়। তার সৎকর্মই তাকে বৃহত্তর জীবনের পথ দেখায়। আর যখন সে নীচ কাজে আসক্ত হয় তখন দানবভাব পুরোপুরি গ্রাস করে। সে নিম্নগামী হয়। তার চিন্তা-ভাবনা ও কাজ তাকে দানবদের মতো করে তোলে। সেইজন্য সবসময় আমাদের উচিত নরকের যন্ত্রণাময় পরিবেশ থেকে নিজেকে দূরে রাখা, এই জগৎকে সরিয়ে রাখা। আর দেবতার মতো মহৎ, উদার মানুষকে সম্মান দেওয়া।

(খ) গুণেতে হইলে বড়ো, বড়ো বলে সবে
বড়ো যদি হতে চাও,  ছোটো হও তবে৷

উত্তরঃ- মানুষ নিজেই নিজের ভাগ্যের স্থপতি। অকর্মণ্যের দল নিজেদের শক্তির সন্ধান রাখে না, নিজেদের কর্মদক্ষতার অভাবে পরের গলগ্রহ হয়ে জীবন কাটায়। অন্যদিকে আত্মশক্তিতে ভরপুর মানুষ কর্মের মধ্যেই লাভ করে নিজের জীবনকে, নিজের ভাগ্যকে গড়ে তোলার দুর্লভ সুযোগ তার হাতে৷ এমনকি বৃহত্তর মানব সমাজের কল্যাণে সে কাজ করে বলেই শত সহস্র বাধা, অন্ধকার ও অসুন্দর সরে যায়।

নিজের প্রশংসা নিজে নয়। অপরের চোখে গুণবান হয়ে উঠতে পারলে তবেই সংসারে বড়ো হওয়া যায়। আত্ম অহংকারে নয়, আত্মবিশ্বাস পরিপূর্ণ হয়ে ওঠা প্রয়োজন। মানুষ নিজেকে দুর্বল ও অসহায় না ভেবে যখন জ্ঞানের আলোয় আত্মশক্তির উদ্বোধন ঘটায় তখন দুর্বলতার শেকল ছেঁড়ে অর্জিত হয় পরিপূর্ণ স্বাধীনতা।

খ- ভাষা অধ্যয়ন (ব্যবহারিক ব্যাকরণ)

কবিতাটিতে কবির নামে যে যুক্তবর্ণ গুলো আছে সেগুলো ভেঙে দেখাও।

শ্চ = শ + চ
ন্দ্র = ন + দ + র
ত্র = ত + র

আমরা কবিতাটিতে আদেশ না অনুরোধমূলক একটি ক্রিয়া পদ পেয়েছি। যেমন – বড়ো যদি হতে চাও, ছোটো হও তবে। ‘হও’ একটি ক্রিয়া পদ। একরম আদেশ না অনুরোধ, উপদেশ, আহ্বান প্রভৃতি জানাবার জন্য ক্রিয়ার যে রূপ ব্যবহার করা হয় তাকে অনুজ্ঞা বলে।

অনুজ্ঞা ভাবের প্রকাশে দুরকম ক্রিয়াপদ দেখা যায়। বর্তমানকালে মধ্যম পুরুষে এবং প্রথম পুরুষে অনুজ্ঞা ব্যবহৃত হয়৷ ভবিষ্যৎকালে শুধুমাত্র মধ্যম পুরুষে অনুজ্ঞা ব্যবহৃত হয়৷ অতীত কালে অনুজ্ঞা হয় না।

কাল অনুযায়ী কীভাবে এর ব্যবহার হয়ে থাকে

অনুজ্ঞার বিভক্তি

কালমধ্যম পুরুষপ্রথম পুরুষ
বর্তমান(ক) তুমি যাও ।
(খ) অন্ধজনে দেহো আলো।
(গ) তুমি এদিকে এসো।
(ঘ) তুই নিপাত যা। (তুচ্ছার্থে বা অনাদরে)
(ঙ) তুই এদিকে আয়। (তুচ্ছার্থে বা অনাদরে)
(ক) সে একথা আরেকবার বলুক তো দেখি
(খ) লোকে জানুক এবার কে জিতবে৷
(গ) তা তিনি আসুন, কথা বলুন আমাদের সঙ্গে।
ভবিষ্যৎ(ক) তাকে বলো যে সে এলে আমি খুশি হবো।
(খ) তাকে জানাবেন আমার কথা৷
(গ) এই ঔষধ সকালে ও বিকেলে একবার করে খাবেন।

‘যা’, ‘খ’, ‘দে’ ক্রিয়াগুলোতে (অনুজ্ঞা) বিভক্তি যোগ করে বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ কালের রূপ লেখো।

নীচের শব্দগুলো দিয়ে বাক্য রচনা করো

সংসার = সংসার সুখের হয় মানুষের গুণে।
কঠিন = পৃথিবী বহু কঠিন সমস্যা রয়েছে৷ 
গুণ = পৃথিবীতে গুণ সম্পন্ন মানুষের সংখ্যা কম।
লোক = ভারতে লোক সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে।

নীচের শব্দগুলোর বিপরীতার্থক শব্দ লেখো।

আপন = পর ।
কঠিন = নরম।
গুণ = দোষ ।
ছোটো = বড়ো ।

তোমার মন ভালো রাখার জন্য কী কী করবে,  দলে আলোচনা করে লেখো। (ধ্যান, প্রার্থনা ইত্যাদি)

কবি কুসুমকুমারী দাশের কবিতাটি আবৃত্তি করি।

“আদর্শ ছেলে”

কবি লিখেছেন – ‘তোমরা মানুষ হলে দেশের কল্যাণ’ – দেশের কল্যাণের জন্য তোমরা কী করবে লেখো৷

উত্তরঃ- ছাত্রজীবন হল কর্মজীবনের মূল ভিত্তি। ছাত্রছাত্রীদের নিকটবর্তী গ্রাম বা বস্তিতে ক্যাম্প করে নিরক্ষরতা দূরীকরণের কাজে আত্মনিয়োগ করা জরুরী। নিরক্ষরদের সংবাদপত্র পাঠ করে শুনিয়ে তাদের মধ্যে জানার আগ্রহ জাগ্রত করতে হবে। তাহলে সাক্ষর হওয়ার হওয়ার ইচ্ছা প্রবল হবে নিরক্ষরদের মধ্যে৷

ছাত্রছাত্রীরা সংগঠিত ভাবে বা এককভাবে সমাজসেবায় আত্মনিয়োগ করে দেশের  বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে সহায়তা করতে পারে। ছাত্রগণ জনসভা, পথ সভা, শোভাযাত্রা করে দেশে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ প্রতিরোধ করতে পারে। অবৈতনিক নৈশ বিদ্যালয় স্থাপন করে নিরক্ষর বয়স্কদের প্রাথমিক শিক্ষা দান করতে পারে। সমাজের অনগ্রসর ব্যক্তিগণকে ‘ম্যাজিক লণ্ঠনের’  স্লাইডের সাহায্যে স্বাস্থ্যবিধান সম্পর্কে সজাগ করে তুলতে পারে। সর্বনাশা খরা, বন্যা, দুর্ভিক্ষ বা বিধ্বংসী ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ছাত্রছাত্রীরা ক্ষতিগ্রস্ত জনসাধারণের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারে। গ্রীষ্মকালীন অবকাশে তারা গ্রামে গিয়ে গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় রাস্তা নির্মাণ, কূপ খনন, জঙ্গল পরিষ্কার প্রভৃতি গ্রাম পূণর্গঠন মূলক কাজে আত্মনিয়োগ করতে পারে।

ছাত্র-ছাত্রীরাই দেশের আশা, দেশের ভবিষ্যৎ, তারাই দেশের শক্তি ও বল। তাদের আছে মহৎ আদর্শ, যৌবনোচিত উৎসাহ ও আত্মত্যাগের মনোবৃত্তি। নির্ভার, ক্ষুদ্র স্বার্থমুক্ত ছাত্রজীবনই সমাজসেবার, কাজে অংশগ্রহণ করবার প্রশস্ত কাল। আগামীদিনের স্বপ্নকে সার্থক করতে ছাত্রগণকে তাই সমাজ কল্যাণকর কাজে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে, বহুমুখী জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

কবি হরিশ্চন্দ্র মিত্র বলেছেন-
“বড়ো হওয়া সংসারেতে কঠিন-ব্যাপার
সংসারে সে বড়ো হয়, বড়ো গুণ যার৷ “

কবি কুসুমকুমারী দাশ বলেছেন –
“আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে
কথায় নয় বড়ো হয়ে কাজে বড়ো হবে!

ওপরের পংক্তিগুলোর ভিত্তিতে তুমি কীভাবে বড়ো হয়ে আদর্শ মানুষ হয়ে উঠবে সেই বিষয়ে তোমার খাতায় পাঁচটি বাক্য লেখো।

উত্তরঃ- (১) নিজেকে সৎ ও সত্যবাদী তৈরি করতে হবে।
(২) গুরুজনদের শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাতে হবে।
(৩) দেশের প্রতি ভালোবাসা থাকবে৷
(৪) গুরুজনদের কথা মানতে হবে।
(৫) সামাজিক দায়িত্ব কর্তব্য পালন করবো।

error: Content is protected !!