সাম্প্রতিক কালে কোভিড-১৯ (Covid-19) এবং অবশ্যে পালনীয় স্বাস্থ্য সম্পর্কীয় নীতি
অতিমারি কোভিড-১৯ (Covid-19) সমগ্র বিশ্বের পাশাপাশি আমাদের রাজ্যেও বিগত সমরকালে যেভাবে ত্রাসের সৃষ্টি করেছে তার ফলে শেক্ষিক দিক থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের বিস্তর ক্ষতিসাধন করেছে |
ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাগ্রহণের ধারাবাহিকতা এবং বিদ্যায়গলিতে একটি সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখার ক্ষেত্রে বিদ্যালয় পরিচালনা সমিতি, অভিভাবক এবং শিক্ষক সমাজ গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
কোভিড-১৯ বা তদ্রূপ সংকটকালে কী ভূমিকা পালন করবেন:
১) জ্ঞাত খবর/সংবাদসমূহ অভিভাবক এবং ছাত্র-ছাত্রীদের আনানোর ব্যবস্থা করে অতিমারীর সময়ে বিদ্যালয়ে রোগ নিরাময় এবং রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা।
২) শিশুদের প্রশ্ন এবং উদ্বেগসমূহ সমাধানে গুরুত্ব প্রদানের পাশাপাশি শিশুদের উপযোগী জিনিসপত্র/উপাদানসমূহ, বিশ্রামকক্ষ, নোটিশবোর্ডসমূহে টাঙিয়ে রাখার ব্যবস্থা করা উচিত যা শিশুদের বিকাশে সাহায্য করবে।
৩) মানসিক স্বাস্থ্য এবং মানসিক সুস্থতার ক্ষেত্রে শিশুদের প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহকে আলোচনা করতে উৎসাহ প্রদান করবেন। বয়স অনুযায়ী উপকরণ প্রদান করবেন।
৪) বিদ্যালয় পরিচালনা সমিতির সদস্যরা ছাত্র-ছাত্রীদের শেখন কর্তৃত্বের /পারদর্শিতা উৎকর্ষ সাধনের চেষ্টা করে
(ক ) সূক্ষ্ম পরিকল্পনা, বিদ্যালয় মানচিত্রকরণ এবং স্থানীয় সহজাত উপকরণের পার্যমানে ব্যবহার।
(খ) সংশোধিত শৈক্ষিক দিনপঞ্জী অনুযায়ী বিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানগুলি অনুষ্ঠিত নিশ্চিতকরণ ৷
(গ) সমাজের অবহেলিত এবং আর্থিকভাবে অনগ্রসর ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি গুরুত্ব প্রদান।
৫) বিদ্যালয়ের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বিদ্যালয় পরিচালনা সমিতি স্থানীয় লোক, সংঘ, বেসরকারী সংস্থা ইত্যাদিকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। এই সংস্থাগুলির বিশেষ উপকরণ, গ্রন্থাগার, খেলার মাঠ, দূরদর্শন ইত্যাদি জিনিসগুলি বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের উপযোগিতার জন্য ব্যবহার করা হয়। কোভিড-১৯ সংক্রান্ত সজাগতা
সৃষ্টির ক্ষেত্রে সজাগতামুলক সভা অনুষ্ঠিত করতে পারেন।
৬) বিদ্যালয় পরিচালনা সমিতি মোড়ল/প্রধানের মাধ্যমে কোভিড-১৯এর সংক্রান্ত সজাগতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে সাহায্য গ্রহণ করতে পারেন।
৭) বিদ্যালয়ে থার্সো স্ক্যানার, সেনিটাইজ্যোর, জল, হাত-ধোয়ার সাবান, মাস্ক ইত্যাদির ব্যবস্থা করা।
শিশুদের মধ্যে কোভিড-১৯ এর সাধারণ লক্ষণসমূহ (কাশি, সর্দি, জ্বর, শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট)
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী স্বাস্থ্য সম্পর্কীয় উপদেশসমূহ যেনে আপনার শিশুটি অসুস্থ থাকে তাহলে তাকে স্কুলে যেতে না দিয়ে বাড়িতে থাকতে দিন এবং বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সে বিষয়ে অবগত করবেন যাতে বাড়িতে থাকাকালীন শিশুটি শেখনের সুবিধা লাভ করতে পারে। যা ঘটছে সে বিষয়ে শিশুটিকে সবল ভাষায় বুঝিয়ে আশ্বস্ত করুন।
বিভিন্ন কারণে শিশুটি চাপের সম্মুখীন হতে পারে। যেখন ঘুমে ব্যাঘাত জন্মানো, বিছানায় প্রস্রাব করা, মাথা ও পেটের ব্যথায় ভোগা, উদ্বিগ্নতা, রাগী তথা একাকী অনুভব করতে পারে। সমস্যাগুলি দূরীকরণে সম্পূর্ণভাবে সমর্থন যোগানো উচিত যাতে তারা, যেকোনো পরিস্থিতিতে স্বাভারিক প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে পারে।
তাদের উদ্বেগগুলি অনুধাবন করে স্নেহ দিয়ে তাদের সান্তনা প্রদানের চেষ্টা করুণ, তারা যে নিরাপদ ও সুরক্ষিত থাকে সে বিষয়ে আশ্বস্ত করুণ শংসা করুন। যদি সম্ভব হয় শিশুদের খেলাধূলার সুবিধা করে দিন। পর্যাপ্ত বিশ্রাম করতে দিন। যতটা সম্ভর রুটিন মেনে চলুন, বিশেষ করে ওরা শুতে যাওয়ার আগে বা নতুন পরিবেশে নতুনত্বের সমাবেশ ঘটাতে পারে। শিশুদের বয়স অনুযায়ী তাদের যাতে বোধগম্য হয় এমনভাবে এবং উদাহরণের সাহায্যে বোঝান যে তারা কিভাবে সংক্রমনের হাত থেকে নিজেকে সুরক্ষিত করতে পারে। সঠিক তথ্যের মাধ্যমে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করুন।
যেসকল শিশুরা সবসময় অসুস্থ হয়ে থাকে খুব অল্পে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং খোধ ক্ষমতা কম হয় বা দেরিতে বোঝে তারা পুষ্টিহীনতায় ভুগতে পারে।
রাষ্ট্রীয় পরিবার স্বাস্থ্য জরীপের (২০১৫-১৬) প্রতিবেদন অনুসারে অসমে কেবল ৮.৫ শতাংশ শিশুই (৬-২৩ মাস) এর পর্যাপ্ত আহার গ্রহণ করে। খাদ্যে শক্তি এবং প্রোটিনের অভাবে রাজ্যে ২৯.৪ শতাংশ এবং ৩৬.৪ শতাংশ শিশুরই বয়স অনুপাতে ওজন ও উচ্চতা কম, অসমে গত পাঁচ বৎসরে ৩৫.৭ শতাংশ শিশুর মধ্যে রক্তহীনতা দেখা দেয়।
শিশুদের পুষ্টিহীনতার অভাবের মূল কারণ হল-
১। সঠিক সময়ে পরিপুরক আহার গ্রহণ না করা।
২। খাদ্যে বৈচিত্র্যের অভাব।
কোভিড-১৯ এর সময়ে শিশুদের পুষ্টিকারক খাদ্যাভ্যাস গঠনে সহায়ক আহার গ্রহণ পদ্ধতি
১) শিশুদের পুষ্টিকারক খাদ্যের জন্য তেরঙা খাদ্য তালিকার ব্যবস্থা করা। অর্থাৎ স্থানীয় পরিবেশ উৎপাদিত সব ধরণের মরশুমি সব রঙের শাক-সবজির সমাহার ই হল তেরঙা খাদ্য তালিকা।
২) আহার করানোর সময় শিশুর সঙ্গে কথা বলুন তাদের গুরুত্ব দিন, পর্যাপ্ত সময় ব্যয় করুন।
৩) শিশুদের জোর করে বা প্রলোভন দিয়ে খাবার খাওয়ানো উচিত নয়।
৪) শিশুর খিদে পেলে বা খেতে ইচ্ছে হলে তবেই খাওয়ানো উচিত।
৫) শিশুদের জন্য আলাদা থালা-বাসন ব্যবহার করা উচিত।
৬) শিশুদের নিজের হাতে খাওয়ার জন্য উৎসাহিত করা উচিত।
৭) আহার তৈরি করার সময় বা খাওয়ানোর সময় পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি সম্পূর্ণ সতর্কতা পালন করার প্রয়োজন৷
৮) জল পান করার জন্য গরম জল বা খাদ্য গ্রহণের জন্য গরম খাদ্য গ্রহণের উপর গুরুত্ব আরোপ করা উচিত৷
সু-স্বাস্থ্য অটুট রাখতে এবং উপযুক্ত শারীরিক বিকাশ এবং উৎকর্ষ সাধনের জন্য নিম্নলিখিত খাদ্য তালিকাটিঃ-
খাদ্য | আহার |
১। প্রোটিনযুক্ত খাদ্য | ১। দুধ, ডাল, মাছ, ডিম, সোয়াবিন, মাংস, টক ঝোল, বিভিন্ন ডালের বড়া ইত্যাদি |
২। শক্তিদায়ক খাদ্য | ২। ভাত, রুটি, চিড়া ইত্যাদি |
৩। চর্বী বা তেলযুক্ত খাদ্য | ৩। ঘি, ক্রিম, বাটার, মাখন, দৈ, দুধের সর ইত্যাদি |
৪ ভিটামিনযুক্ত খাদ্য | ৪। সবুজ শাক-সবজি স্যালাড, গাজর,টমাটো, বুট, মুগ, আপেল, পেয়ারা, মোচা, কাঁচাকলা, শশা ইত্যাদি। |
সাম্প্রতিক কালে কোভিড-১৯
কোভিড-১৯ রোগ প্রতিরোধের জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার নিয়মাবলি :
১) হাত ধোয়া : শিশুদের হাত দুটি সাবান বা সেনিটাইজার দিয়ে মাঝে মাঝে হাত ধোয়ানোর অভ্যাস করানো। ২০ সেকেন্ড ধরে ধোয়ার অভ্যাস করানো উচিত।
২) মাস্ক পরিধান : মুখে মাস্ক লাগানোর অভ্যাস মেনে চলা বাধ্যতামূলক পরিস্কার মাস্ক পরিধান করায় গুরুত্ব আরোপ করা। একজনের মাস্ক যাতে অন্য আরেকজন ব্যবহার না করে।
৩) দূরত্ব বজায় রাখা : শিশুদের মধ্যে সামাজিক এবং শারিরীক দূরত্বে অবস্থান করে অন্যের সান্নিধ্যে আসার অভ্যাস গড়ে তোলে।
৪) সার্বজনীন স্থানে থু-থু, কফ ফেলার অভ্যাস থেকে দূরে থাকা।
৫) করমর্দন ত্যাগ করা : শিশুদের একে অপরকে জড়িয়ে ধরার অভ্যাস, হাত ধরার অভ্যাস থেকে বিরত থাকা উচিত।
সাম্প্রতিক কালে কোভিড-১৯