(একপদীভাবঃ সমাস) কিন্তু দুইটি পদ পাশাপাশি থাকিলেই সমাস বা একপদীভাব হয় না; যদি না তাহাদের যোগ্যতা থাকে। যথা, রামলক্ষ্মণে বনে গিয়াছিলেন। এখানে যোগ্যতা থাকায় রামলক্ষ্মণ দ্বন্দ্ব সমাস হইয়াছে। কিন্তু রামলক্ষ্মণকে বলিল-এই পদে রামলক্ষ্মণকে সমাস হইবে না। কারণ ইহাদের অর্থ সম্পর্ক ঠিক থাকে না।
সমস্ত পদ কাহাকে বলে ?
যে কয়টি পদ লইয়া সমাস করা হয়, তাহাদের নাম সমস্যমান পদ এবং সমাসবদ্ধ পদটিকে বলা হয় সমস্ত পদ।
সমস্ত পদের উদাহরণ –
“শোকাকুল”
ব্যাসবাক্য কাহাকে বলে ?
যে বাক্য সমস্যমান পদগুলির পরস্পর সম্পর্ক নিরূপণ করে তাহার নাম ব্যাসবাক্য, বিগ্রহবাক্য বা সমাসবাক্য।
সমাসবদ্ধ পদের প্রথমটির নাম পূর্বপদ আর পরেরটির নাম উত্তর পদ। যেমন, “শোকাকুল’ একটি সমস্ত পদ। “শোকের দ্বারা আকুল’ হইতেছে ব্যাসবাক্য “শোক” ও ‘আকুল’ পদ দুইটি সমস্যমান পদ। “শোক’ পূর্বপদ এবং ‘আকুল” উত্তরপদ। সংস্কৃতের মত বহু শব্দের সমাস বাংলায় ব্যাক্যাংশ সমাস ছাড়া অন্যত্র চলে না, বৈদিকের মত দুইটি পদ লইয়াই বাংলায় সমাস গঠিত হয়।
প্রসঙ্গত, সমাস ও সন্ধির পার্থক্যটি চিনিয়া লওয়া দরকার। সন্ধিতে দুই বর্ণের মিলন ঘটে এবং তাহাতে ধ্বনিগত পরিবর্তন হয়, কিন্তু সমাসে দুই পদের মিলন ঘটে এবং তাহাতে অর্থগত পরিবর্তন সাধিত হয়। সন্ধিতে কোন পদেরই বিভক্তি চিহ্ন লোপ পায়না, কিম্বা পদের সংখ্যা কমে না, কিন্ত সমাসে বিভক্তি চিহ্ন যেমন লোপ পায়, তেমনি সমস্যমান পদগুলি একটি মাত্র পদে পরিণত হয়। যেমন সন্ধির উদাহরণ = =’নর + ঈশ’ = নরেশ, এবং সমাসের উদাহরণ, গাছে পাকা = গাছপাকা, ৭মী তংৎপুরুষ সমাস।
যেসকল স্থলে সন্ধি ও সমাসের সম্ভাবনা বর্তমান, সে সকল স্থলে দুইই করা উচিত। কিন্তু শ্রুতি কটুত্বের আশঙ্কা থাকিলে বাংলায় উভয়ই নিষিদ্ধ।
বাংলায় সমাস কত প্রকার ও কি কি ?
বাংলায় সমাস ছয় প্রকার – দ্বন্দ্ব, দ্বিগু, কর্মধারয়, তৎপুরুষ, অব্যয়ীভাব ও বহুব্রীহি।
সংস্কৃত ব্যাকরণে সমাস কত প্রকার ও কি কি ?
সংস্কৃত ব্যাকরণে সমাস চার প্রকার – অব্যয়ভাব তৎপুরুষ, দ্বন্দ্ব ও বহুব্রীহি, কর্মধারয় ও দ্বিগু তৎপুরুষের অন্তর্গত।
ড° সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় বাংলা সমাসকে প্রধানত তিনভাগে বিভক্ত করিয়াছেন প্রধান
ভাগগুলি আবার নানা উপ-বিভাগে বিভক্ত।
প্রধান তিনটি ভাগ-
(১) সংযোগমূলক (২) ব্যাখ্যানমূলক (৩) বর্ণনামূলক।
১। সংযোগমূলক :
(ক) দ্বন্দ সমাসঃ যে সমাসে সমস্যমান পদগুলির প্রত্যেকটির অর্থপ্রাধান্য থাকে এবং পূর্বপদ ও উত্তরপদ সংযোগমূলক অব্যয়দ্বারা যুক্ত হয়, তাহার নাম দ্বন্দ্ব সমাস। যেমন – মেয়ে ও পুরুষ = মেয়ে পুরুষ, দ্বন্দ্ব সমাস নানা প্রকারের হয়। যেমন –
(১) সাধারণ দ্বন্দ্ব – অহঃ ও রাত্রি = অহোরাত্র, কুশ ও লব = কুশীলব
(২) অলুক দ্বন্দ্ব – বনে ও বাদাড়ে. = বনেবাদাড়ে, দুধে ও ভাতে = দুধেভাতে
(৩) বিপরীতার্থক – পাপ ও পুণ্য = পাপপুণ্য, অহি ও নকুল = অহিনকুল
(8) বিকল্পার্থক – সাধারণত দুইটি পদের মধ্যে কোন একটি বুঝাইতে বিকল্লার্থক শব্দ ব্যবহৃত হয়। এস্থলে বা, কিংবা, অথবা ইত্যাদি অব্যয় ব্যবহৃত হয়। হার বা জিত = হারজিত; জয় অথবা পরাজয় = জয়পরাজয়।
(৫) সমার্থক – হাট + বাজার – হাটবাজার। রাজা (বাং) + উজীর (ফার্সি) রাজা উজীর
প্রভৃতি।
(৬) একশেষ দ্বন্দ্ব – যেখানে সমস্যমান পদগুলি একটি মাত্র পদে পরিণত হয়। যথা, আমি ও তুমি = আমার। তুমি ও সে = তোমরা।
২। ব্যাখ্যানমূলক বা আশ্রয়মূলক সমাস :
ব্যাখ্যানমূলক সমাস বলিতে প্রধানতঃ তৎপুরুষ এবং গৌণতঃ কর্মধারয় ও দ্বিগু সমাসকে বুঝায়।
(১) তৎপুরুষ : পূর্বপদের কারকবোধক বিভক্তির লোপ হইয়া ইহার সহিত পরপদের সমাসে প্রায় পরপদের অর্থ প্রাধান্য দেখা দিলে তৎপুরুষ সমাস গঠিত হয়। তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদে যে বিভক্তির চিহ্ন বর্তমান থাকে, তৎপুরুষ সমাসটিও সেই বিভক্তির নামে চিহ্নিত হয়। যথা দুঃখকে প্রাপ্ত = দুঃখপ্রাপ্ত, বিপদকে আপন্ন = বিপদাপন্ন। তৎপুরুষ সমাস বহু প্রকারের-
(ক) দ্বিতীয়া তৎপুরুষ : কর্মসম্বন্ধ বুঝাইতে দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস হয়। যথা- গুরুকে মারা = গুরুমারা, বিপদাপন্ন, স্বর্গপ্রাপ্ত।
(খ) তৃতীয়া তৎপুরুষ : করুণ সম্বন্ধ বুঝাইতে তৃতীয়া তৎপুরুষ হয় যথা-গুণের দ্বারা মুগ্ধ =
গুণমুগ্ধ। রৌদ্রদ্বারা দগ্ধ – রৌদ্রদগ্ধ। এইরূপ মনগড়া, মাতৃহারা প্রভৃতি।
(গ) চতুর্থী তৎপুরুষ : সম্প্রদান বুঝাইতে চতুর্থী তৎপুরুষ হয়। যথা দেবকে দত্ত = দেবদত্ত, শিবাকে ভোগ = শিবাভোগ।
(ঘ) পঞ্চমী তৎপুরুষ : অপাদান কারক বুঝাইতে পঞ্চমী তৎপুরুষের ব্যবহার হয়। যথা- শাখা হইতে চ্যুত = শাখাচ্যুত, স্বর্গ হইতে ভ্রষ্ট = স্বর্গভ্রষ্ট। এইরূপে বিলাতফেরত, কলেজ পালানো।
(৬)যষ্ঠী তৎপুরুষঃ সম্বন্ধ পদ বুঝাইতে ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস ব্যবহার করা হয়। যথা –
রাজ্য = পশুরাজ্য, নদীর মাঝ = মাঝনদী। এই রূপ ছাগদুগ্ধ, মালগাড়ী, ভোটাধিকার।
(ঢ) সপ্তমী তৎপুরুষ : অধিকরণ কারক বুঝাইতো সপ্তমী তৎপুরুষের ব্যবহার হয়। যথা – বনেবাস = বনবাস; জলেহাত = জলহাত।
প্রথমা বিভক্তির চিহ্তযুক্ত সমাসই কর্মধারর সমাস। তাই প্রথমা তৎপুরুষ বলা ঠিক নহে। তবে অনেকে বাংলায় প্রথমা তৎপুরুষের অস্তিত্ব স্বীকার করেন। যেমন- বাজ-পড়া; দাগ লাগা; ঘর চাপা ইত্যাদি।
নঞ্ তৎপুরুষ : যে তৎপুরুষ সমাসের পূর্বপদে নঞর্থক অব্যয় বর্তমান থাকে, তাহাকে নঞ্
তৎপুরুষ বলে। যথা- ন সাধু = অসাধু; নয় জানা = অজানা; নাইমিল = অমিল।
উপপদ তৎপুরুষ : যে বিশেষ পদে কৃদন্ত শব্দের পূর্ব ব্যবহৃত হয় তাহাকে “উপপদ’ বলা হয়। উপপদ পদের সঙ্গে কৃদন্ত শব্দের যে সমাস হয় তাহাকে উপপদ তৎপুরুষ সমাস বলে। যথা- পঙ্কে জন্মে যাহা পঙ্কজ (পঙ্ (উপপদ) জন (ধাতু) ড (কৃৎ)- প্রত্যয়। ইন্দ্রকে জয় করে যে – ইন্দ্রজিৎ।
প্রাদি তৎপুরুষ : প্র-আদি কোন উপসর্গ যদি তৎপুরুষ সমাসের পূর্বপদে ব্যবহৃত হয়, তবে
‘তাহাকে প্রাদি তৎপুরুষ সমাস বলে ৷ যথা- বেলাকে উৎক্রান্ত = উদ্বেল; প্র-কৃষ্ট ভাত – প্রভাত। এইরূপ অতিমানব; প্রপিতামহ, প্রত্যক্ষ প্রভৃতি।
(২) অব্যয়ীভাব : যে সমাসের পূর্বপদটি অব্যয় এবং সমস্ত শব্দটিও অব্যয় পরিণত হয়, তাহাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলা হয়। অব্যয়ীভাব সমাস মূলতঃ প্রাদি তৎপুরুষেই অন্তর্ভুক্ত। যথা- শক্তিকে
অভিক্রম না করিয়া = যথাশক্তি; ভিক্ষার অভাব = দুর্ভিক্ষ; দ্বীপের সদৃশ = উপদ্বীপ।
(৩) দ্বিগু সমাস : যে তৎপুরুষ সমাসের পূর্বপদ সংখ্যাবাচক শব্দ এবং সমগ্র পদটির দ্বারা সমষ্টি বুঝায় তাহাকে দ্বিগু সমাস বলে। দ্বিগু সমাস তৎপুরুষ সমাসের অন্তর্গত । যথা-সপ্তঋষির সমাহার = সপ্তর্ষি, চারি মাথার সমাহার = চৌমাথা; দ্বিমাতা যাহার = দ্বৈমাতৃক।
(৪) কর্মধারয় সমাস : যে সমাসে প্রথম পদটি দ্বিতীয় পদের বিশেষরূপে থাকিয়া দ্বিতীয় পদের অর্থপ্রাধান্য বজায় রাখে তাহাকে কর্মধারয় সমাস বলে। দুইটি বিশেষণ পদ মিলিয়াও কর্মধারয় সমাস হয়।যথা- নীল যে উৎপল = নীলোৎপল। কর্মধারয় সমাসকে পৃথক সমাস হিসাবে গণ্য করা হইলেও
আসলে ইহা প্রথমা তৎপুরুষ। কর্মধারয় সমাস নানা প্রকারের হইয়া থাকে।
১। (ক) সাধারণ কর্মধারয় : বিশেষণ + বিশেষ্য = কু যে পুরুষ = কুপুরুষ। এইরূপে মহানদী, মহারাজা, অপরাহ্ন।
(খ) বিশেষ্য + বিশেষণ = ঘননীল; হলুদবাটা।
(গ) বিশেষণ + বিশেষণে তাজাও যাহা মরাও তাজা + তাজামরা। এইরূপ নীললোহিত; মধুর-ভাষণ ইত্যাদি
(ঘ) বিশেষ্য + বিশেষ্য = সর্দারও যে পড়ুয়াও সে – সর্দারপড়ুয়া এইরূপ ব্রাহ্মণ-পণ্ডিত।
(৬) অবধারণা – পূর্বপদ কর্মধারয় = ইহাতে প্রথম পদের অর্থের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়। যথা- উদরই সর্বস্ব = উদরসর্বস্ব।
(চ) পূর্বনিপাত – কর্মধারয় = এই সমাসে,পরে যে পদের বসা কর্তব্য, তাহা আগেই বসে। ছন্নমতি = মতিছন্ন; উত্তম পুরুষ = পুরুষোত্তম
২।মধ্যপদলোপী কর্মধারয় : এই জাতীয় কর্মধারয় সমাসে ব্যাস-বাকোযের মধ্যবতী ব্যাখ্যানমূলক পদের লোপ পায়। যথা-সিংহ চিহ্নিত আসন = সিংহাসন; অষ্ট অধিক দশ = অষ্টাদশ; নাতি পর্যায়ের জামাই =নাত্জামাই।
৩। উপমানমূলক কর্মধারয় : এই সমাসে দুইটি বস্তুর পরস্পরের মধ্যে তুলনা বা উপমা থাকে।
এই তুলনা বা উপমার ক্ষেত্রে যাহা উপমিত হয় অর্থাৎ যাহাকে তুলনা করা হয় তাহাকে উপমেয় বলে। আবার যাহার সঙ্গে তুলনা করা হয় তাহাকে বলা হয় উপমান। উপমানমূলক কর্মধারয় তিন প্রকারের হয়।
(ক) উপমান কর্মধারয় – যে কর্মধারয় সমাসে পূর্বপদে উপমা এবং উত্তরপদে সাধারণ ধর্মট বর্তমান থাকে, তাহাকে উপমান কর্মধারয় বলে। যথা-মিশির মত কালো = মিশকালো; নবদূর্বাদলের
মত শ্যাম = নবদুর্বাদলশ্যাম।
(খ) উপমিত কর্মধারয় – যে কর্মধারয় সমাসে উপমান উত্তরপদে এবং উপমেয় পূর্বপদে বসে
এবং সাধারণ ধর্মটি উহ্য থাকে, তাহাকে উপমিত কর্মধারয় বলে। যথা, যে পুরুষ সিংহের মত = পুরুষসিংহ, চাদের মতন বদন = চাঁদবদন।
(গ) রূপক কর্মধারয় – যে কর্মধারয় সমাসে উপমান উত্তরপদ এবং উপমেয় পূর্বপদরূপে
ব্যবহৃত হয় এবং উভয়ের মধ্যে উপমা না বুঝাইয়া অভেদ বুঝায়, তাহাকে রূপক কর্মধারয় সমাস বলে। যথা- শোকরূপ অনল = শোকানল; বাদলা – রূপদূতী = বাদলদূতী। এইরূপ প্রেমড়োর, জ্ঞানীলোক, পুণ্যবৃক্ষ।
বর্ণনামূলক সমাস এর অপর নাম কি ?
৩। বর্ণনামূলক সমাস – বহুব্রীহি সমাস :
যে দুইটি পদে সমাস হয়, সমস্ত পদটি তাহাদের কোনটিকে না বুঝাইয়া যদি অপর কোন পদার্থকে নির্দেশ করে তাহাকে বহুব্রীহি সমাস বলে। যথা- পীত অস্বর যাহার = পীতাম্বর। এখানে পীত বা অম্বর কোনটিকে না বুঝাইয়া পীতাম্বরধারী কৃষ্ণকে বুঝানো হইয়াছে। বহুব্রীহি সমাসই একমাত্র বর্ণনামূলক সমাস। বহুব্রীহি সমাস বহু প্রকারের হয়-
(ক) সমানাধিকরণ বহুরীহি : যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্বপদ বিশেষ্য ও উত্তরপদ বিশেষণ এবং উভয় পদে একই বিভক্তি হয় তাহাকে সমানাধিকরণ বহুরীহি বলে যথা- নীলকণ্ঠ যাহার = নীলকণ্ঠ। এইরূপ কটাচোখা, দীর্ঘবাঙ ইত্যাদি
(খ) ব্যধিকরণ বহুব্রীহি : যে বহুব্রীহি সমাসের উভয় পদই বিশেষ্য এবং উভয় পদের বিভক্তি
সমান নয়, তাহাকে ব্যধিকরণ বহুব্রীহি বলে। এই জাতীয় সমাসে উত্তরপদটি সর্বদাই সপ্তমী বিভক্তিযুক্ত হইয়া থাকে। যথা- চন্দ্র ছুড়ে যাহার = চন্দ্রচুড়; বীণা পাণিতে যাহার = বীণাপাণি। এইরূপ পদ্মনাভ
বজ্রপাণি ছড়িহাতে।
(গ) মধ্যপদলোপী বহুৰীহি : যে বহুব্রীহি সমাসে মধ্যপদ বা পদসমূহ লুপ্ত হয় মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি বলে। যথা-খঞ্জনের মত নয়ন যাহার = খঞ্জননয়নী; বিশ্বের মত অধর যাহার (স্ত্রীলোক) = বিম্বাধরা। এইরূপ স্বর্ণাভ; বৃযস্কন্ধ, রা্নগর্ভা, পিছপা, পাতাবাহার ইত্যাদি।
(ঘ) ব্যতিহার বহুব্রীহি : পরস্পরের মধ্যে একই প্রকার ক্রিয়ানুষ্ঠান বুঝাইলে ব্যতিহার বহুব্রীহি হয়। যথা- কেশে কেশে যে যুদ্ধ = কেশাকেশী, লাঠিতে লাঠিতে যে যুদ্ধ = লাঠালাঠি। এইরূপ কানাকানি, ঘুযাঘুষি, কোলাকুলি।
(ঙ) সংখ্যা বীহি : যে বহুব্রীহি সমাসের পূর্বপদটি সংখ্যাবাচক শব্দ, তাহাকে সংখ্যা বহুব্রীহি বলে। যথা-দশ আনন যাহার = দশানন। এইরূপ যড়ানন, দোনলা, একরোখা।
(চ)নঞ্ বহুব্রীহি বা নিষেধ বহুব্রীহি : যে বহুব্রীহি সমাসের পূর্ব পদে নিষেধার্থক নঞ্ বা অন্য অব্যয় বর্তমান থাকে, তাহাকে নঞ্ বহুব্রীহি বলে। যথা- নাই আদি যাহার = অনাদি; নাই পয়া যাহার = অপয়া। এইরূপে নিখরচে, অক্ষয়, নির্মূল।
(ছ) তুল্যযোগে বহুব্রীহি = যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্বপদে ‘সহ’ থাকে তাহাকে সমানার্থক বা তুল্যযোগে বহুব্রীহি বলা হয়। যথা- সহ উদর যাহার = সহোদর। এইরূপ সগোত্র, সতীর্থ, সপরিবার, পুত্রের সহ বর্তমান= সপুত্র।
(জ)অন্ত্যপদলোপী বহুব্রীহি : যে বহুব্রীহি সমাসে ব্যাসবাক্যের অন্তাপদের লোপ হয়, তাহাকে অন্ত্যপদলোপী সমাস বলে। যথা-বিশ হইতে পঁচিশ সীমা যাহার = বিশপঁচিশ; পাঁচহাত পরিমাণ যাহার = পাঁচহাতি; গায়ে হলুদ দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠান – গায়েহলুদ।
একদেশী তৎপুরুষ সমাসের উদাহরণ –
রাত্রির মধ্যে = মধ্যরাত্রি; দরিয়ার মাঝ = মাঝদরিয়া ।
বিবিধ সমাস
(১) একদেশী সমাস : যষ্ঠী তৎপুরুষ সমাসের মধ্যে দুইটি পদের যদি অঙ্গাঙ্গী বা অংশাশীভাব বর্তমান থাকে, তবে তাহাকে একদেশী সমাস বলে। একদেশী সমাসে যষ্টী বিভক্তিযুক্ত পদটি পরে যায়। যথা — রাত্রির মধ্যে = মধ্যরাত্রি; দরিয়ার মাঝ = মাঝদরিয়া।
(২) সুপসুপা বা সহসুপা সমাস : একটি সুপযুক্ত (শব্দ বিভক্তি) পদের সহিত আর একটি সুপযুক্ত পদের সমাসকে সুপসুপা বা সহসুপা সমাস বলে। ব্যাপক অর্থে যে কোনও সমাসই সুপ্সুপা সমাস। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যে সকল সমাসকে অন্য সমাসের অন্তর্ভূক্ত করা যায় না, তাহাদিগকে সুপসুপা বা সহসুপা সমাসবলে। যথা -পূর্বে ভূত = ভূতপূর্ব; পরম পূজ্য = পরমপূজ্য।
(৩) নিত্য সমাস : যে সমাসে ব্যাসবাক্য হয়না, অর্থ প্রকাশ করিবার জন্য অন্য আর একটি পদের সাহায্যে ব্যাসবাক্য করিতে হয়, তাহাকে নিত্য সমাসবলে। যথা- অন্যদ্বীপ = দ্বীপান্তর; তাহামাত্র = তন্মাত্র্য অন্য গ্রাম = গ্রামান্তর; কেবল জল = জলমাত্র; কেবল দর্শন = দর্শনমাত্র।
(৪) মিশ্র সমাস : বিভিন্ন প্রকার সমাসের যোগে দীর্ঘপদ গঠন করিয়া ভাষায় প্রকাশ করিবার রীতি আছে। ইহাদিগকে মিশ্র সমাস বলে। ইহাকে পদগর্ভ বলা যায়। যথা- নদী-জপমালা-ধৃত প্রান্তর দশের ইচ্ছা-বোঝাই-করা জীবনতরী।
(৫) অসংলগ্ন বা শিথিল সমাস : পরস্পর সংযুক্ত পৃথক পদসমষ্টিতে একপদী ভাবটি না থাকিলেও কখন কখন তাহাকে সমাস বলিয়া মন্যকরা চলে। এই রূপ পদসমষ্টির নাম অসংলগ্ন বা শিথিল সমাস। যথা – নিখিল ভারতবঙ্গ সাহিত্য স্মন্মিলনী, সব পেয়েছির দেশ, এক যে ছিল রাজা।
(৬) বাক্যাংশ সমাস ( Phrasal Syntactical)
(ক) ব্যক্তিনামঃ (১) প্রথমপদ অনুজ্ঞা বা নিষেধসূচক অব্যয়, দ্বিতীয় পদ সম্বোধন : থাকমনি, থাকহরি, আন্নাকালী (আর না কালী) ভয়গোপাল, ভজহরি। (২) উভয় পদই সম্বোধন: হরেকৃষ্ণ, হরেরাম।
(খ) ব্যক্তিনাম অথবা সাধারণ বিশেষ : হরিবোল (হরি এই বোল) অথবা হরিবোল –
অনুজ্ঞা।
(গ) বিবিধ : নাস্তানাবুদ, যাচ্ছেতাই।
আরোও পড়ুন
সাধু ও চলিত ভাষা