সাধু ও চলিত ভাষা বা বাক্য বিন্যাসের সাধু ও কথা রীতি | বাংলা ব্যাকরণ | সাধু ও চলিত ভাষা
বাংলা ভাষায় বাক্যবিন্যাসের দুইটি রীতি আছে- সাধু ও চলিত। সাধু ভাষা বাংলা গদ্যের প্রথম হইতে চলিয়া আসিতেছে। ইহা সংস্কৃতানুসারিণী এবং শিষ্টজন সন্মত ও সাহিত্যে ব্যবহৃত। পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ইহাকে সাধু ভাষা আখ্যা দিয়াছেন। অপরপক্ষে ভাগীরথীর তীরবর্তী ভদ্রজনদের
মৌখিক ভাষার মার্জিত লেখ্যরূপ হইতেছে চলিত ভাষা। প্রমথ চৌধুরী, রবীন্দ্রনাথ প্রভৃতি লেখকদের সহায়তায় ইহা অত্যন্ত জনপ্রিয় হইয়াছে এবং সাধু ভাষার প্রাধান্য খর্ব করিয়াছে।
বাংলা ভাষায় সাধু ও চলিত রীতির মধ্যে যে পার্থক্য ও পারস্পরিক প্রভাব দেখা যায়, তাহা নিম্নরূপ-
(১) উভয় রীতির সর্বনাম এবং ক্রিয়াপদের রূপের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান । সাধু রীতিতে সর্বনাম এবং ক্রিয়াপদগুলির পূর্ণরূপ ব্যবহৃত হইলেও চলিত রীতিতে উহাদের বেশ খানিকটা সংকোচ সাধিত হয়। যেমন সাধু রীতিতে প্রচলিত ‘আসিয়াছি’ ‘শুনিবে’, ‘গাহিলাম’ প্রভৃতি ক্রিয়াপদ এবং ‘ইহারা”, ‘তাহাতে’ প্রভৃতি সর্বনাম পদ চলিত রীতিতে হয় “এসেছি’, শুনবে” ‘গাইলাম’ এবং ‘এরা” ‘তাতে’।
(২) বাংলা ভাষার সাধু রীতিতে অবশ্য চলিত রীতিতে ব্যবহৃত সর্বনাম এবং ক্রিয়াপদ পরিলক্ষিত হয়। যেমন- আগশুতোষকে বিশ্বতোষ যে চেনে, সেও আমি জানি। এখানে বিশুদ্ধ সাধু রীতিতে “চেনে ‘র পরিবর্তে চিনে “সেও’র পরিবর্তে ‘তাহা’ও ব্যবহৃত হওয়া সমীচীন।
(৩) সাধু রীতির চেয়ে চলিত রীতিতে স্বরসঙ্গতি অভিশ্রুতিমূলক স্বরধ্বনির পরিবর্তন সমাধিক লক্ষিত হয়।
(৪) সাধু রীতিতে তৎসম শব্দের ঘনঘটা বড়ই বেশি। কিন্তু চলিত ভাষায় তৎসম শব্দের প্রয়োগ বড়ই অল্প। বিদেশী শব্দ সাধু রীতি অপেক্ষা চলিত রীতিতেই অধিক পরিমাণে ব্যবহৃত হইয়া থাকে।
(৫) সাধু রীতি খানিকটা কৃত্রিম এবং এইজন্য যে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের কথোপকথনের সঙ্গে ইহার সঙ্গতি নাই। তবু এই রীতির যে গাম্ভীর্য এবং আভিজাত্যজনিত সৌষ্ঠৰ আছে তাহাকে অস্বীকার করা যায় না। পক্ষান্তরে, চলিতরীতি সাধু রীতির চেয়ে জীবন্ত হইলেও হাল্কা চালে ইহা চলে
এবং প্রাত্যহিক মৌখিক আলাপ আলোচনা রীতির সঙ্গে ইহার সম্পর্ক বড়ই নিবিড়। The real and natural life of Language is in its dialects – Maxmuller এর এই উক্তিটি যে একান্তভাবে সত্য ইহা বাংলাভাষীয় চলিত বা কথ্য রীতি পর্যালোচনা করিলে স্পষ্টই অনুভূত হয়।
(৬)চলিত রীতির অপরতম লক্ষ্যণীয় বৈশিষ্ট্য তাহার “বিশিষ্টার্থক শব্দগুচ্ছ’ সাধু ভাষায় এই
বিশিষ্টার্থক শব্দগুচ্ছের ব্যবহার খুবই সীমিত। বস্তুতঃ বিশিষ্টার্থক শব্দগুচ্ছই চলিত রীতির প্রাণস্বরূপ। বাংলাদেশর বিভিন্ন অঞ্চলের কথ্য ভাষায় ব্যবহৃত এই বিশিষ্টার্থক শব্দগুচ্ছকে চলিত রীতিতে সার্থকভাবে ব্যবহার করিতে পারিলে যে আমাদের ভাষা সবিশেষ সমৃদ্ধিশালিনী হইয়া উঠিতে পারে, তাহাতে সন্দেহের অবকাশ নাই।
সাধু রীতির উদাহরণ– “পরমেশ্বরের বিচিত্র রচনা দর্শনার্থে পরম কৌতুহলী হইয়া, আমি কিয়ৎকালাবধি দেশভ্রমণে প্রবৃত্ত হইয়াছি এবং নানা স্থানে পর্যটনপূর্বক এখন মথুরা সন্নিধানে আসিয়া
অবস্থিতি করিতেছি। এখানে একদিবসে দুঃসহ গ্রীষ্মাতিপ্রযুক্ত অতিশয় ক্লান্ত হইয়া সায়ংকালে যমুনাতীরে উপবেশ পূর্বক সুললিত লহরী লীলা অবলোকন করিতেছিলাম।” (অক্ষয়কুমার দত্ত)
চলিত রীতির নিদর্শন-“আজ কি কাণ্ড বাধিয়ে বসে আছে। কারু মানা শুনবে না। যেখানে যত হতভাগা আছে, দেখলেই তার দিকে কোমর বেঁধে দাড়াবে। আজ বৌ-ঠান আমাকে না-হক দশকথা শুনিয়ে দিলেন”
আধুনিক কালে সাধু ভাষা যে ক্রমশঃ চলিত ভাষার কাছাকাছি আসিয়া গিয়াছে তাহা নিম্নোক্ত উদাহরণে বুঝা যাইবে-
“সেদিন কনকনে শীতের সমন্ধ্যা। আগের দিন খুব এক পশলা বৃষ্টিপাত হওয়ায় শীতটা যেন সুঁচের মত গায়ে বিধিতেছিল আকাশে পূর্ণচন্দ্র। চারিদিক জ্যোৎস্নায় ভাসিয়া যাইতেছে। হঠাৎ ইন্দ্র আসিয়া হাজির। কহিল,- তে থিয়েটার হবে, যাবি? থিয়েটারের নামে আমরা একেবারে লাফাইয়া উঠিলাম। ইন্দ্র কহিল, তবে কাপড় পরে শীগ্গীর আমাদের বাড়ী আয় ।”-শরংচন্দ্র
প্রসঙ্গতঃ ইহা বিশেষরূপে স্মরণ রাখিতে হইবে যে, একই রচনায় সাধু ও চলিত রীতির মিশ্রণ সর্বৈ বর্জনীয়
বাংলা উচ্চারণের এবং ধ্বনি পরিবর্তনের কতকগুলি বিশেষ রীতিঃ
আমরা যখন কথা বলি তখন ধ্বনিগুলি পৃথকভাবে পরপর উচ্চারিত হইলেও মনের মধ্যে সেগুলি অবিচ্ছিন্নভাবেই আসে। ফলে উচ্চারণের সময় পূর্ববর্তী ধ্বনি পরবর্তী ধ্বনিকে অথবা পরবর্তী ধ্বনি পূর্ববর্তী ধ্বনিকে প্রভাবিত করিতে পারে। উচ্চারণের দ্রুততার অথবা উচ্চারণ প্রযত্ন শিথিল করিবার চেষ্টার ফলে পরস্পর দুই ধ্বনির মধ্যে একটি অথবা উভয় ধ্বনি বিকৃত হইতে পারে। শ্বাসাঘাতের
তীব্রতার জন্যও ধ্বনি বিকৃত অথবা লোপ হয়। নিম্নে এইরূপ কয়েকটি বিশেষ রীতির কথা আলোচনা করা হইল।
১। বিপ্রকর্য বা স্বরভক্তি (Anaptyxix বা Vowel Insertion) : উচ্চারণ সৌকর্যের জন্য বা ছন্দের অনুরোধে অথবা শ্রুতিসুখকরত্বের জন্য অনেক সময় সংযুক্ত ব্যঞ্জন ধ্বনিকে ভাঙ্গিয়া স্বরধ্বনির আনয়ন ব্যাপারকে বলা হয় স্বরভক্তি বা বিপ্রকর্ষ। যথা, কর্ম > করম, ভক্তি > ভকতি, বর্ষা > বরষা, গ্লাস (ইং) > গেলাস, প্রীতি > পিরীতি।
২। স্বরসঙ্গতি (Vowel Harmony) : বাংলা সাধুভাযায় প্রধানতঃ চলিত ভাষায় পরবর্তী বা
পূর্ববর্তী স্বরধ্বনির প্রভাবে, পদস্থিত অপর অক্ষরের স্বরধ্বনির উচ্চারণ স্থান বদলাইয়া যায় অর্থাৎ দুইটি পৃথক ধরনের স্বরবর্ণের মধ্যে একটি সঙ্গতি বিধান হয়, ইহাকে স্বরসঙ্গতি বলে।
সাধারণতঃ দেখা যায় যে উচ্চাবস্থিত স্বরধ্বনি নিম্নবস্থিত স্বরধ্বনিকে উচ্চে টানিয়া লয় কিংবা নিম্নবস্তিত স্বরধ্বনি উচ্চাবস্থিত স্বরধ্বনিকে টানিয়া নীচি নামাইয়া দেয়। যেমন, দেশী > দিশী, বিলাতি > বিলিতি, শুনা > শোনা।
এই স্বরসঙ্গতি চার রকমের হইতে পারে।
(১) প্রগত (অস্ত্যস্বর আদ্যস্বর অনুযায়ী পরিবর্তিত হইলে), মূল্য > মূল, শিকা > শিকে,
(২) পরাগত (আদ্যস্বর, অন্ত্যস্বর অনুযায়ী পরিবর্তিত হইলে) গোটা > গট (উপভাযা), আখো > এখো;
(৩) মধ্যগত (আদ্য ও অন্ত্য অথবা আদ্য কিংবা অন্ত্যস্বর অনুযায়ী মধ্যস্বর পরিবর্তিত হইলে) বিলাতি > বিলিতি, বারেন্দা > বারান্দা,
(৪) অন্যোন্য (আদ্য ও অন্ত্য দুই স্বরই পরস্পর প্রভাবান্বিত হইলে) মোজা > মুজো (উপভাষা), ধৌকা > ধুকো (এ)
৩। অপিনিহিতি ( Epenthesis) : শব্দের মধ্যস্থিত কিংবা অস্ত্যস্থিত ই-কার বা উ-কার স্ব-স্থানে থাকিয়া বা স-স্থান পরিত্যাগ করিয়াও যদি অব্যবহিত পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনের পূর্বে আসিয়া যায় তবে তাহাকে অপিনিহিত বলে। যথা- আজি > আইজ, কালি > কাইল, সাধু > সাউধ, জলুয়া > জউলুয়া (জলো),
সত্য > সইত্ত, ব্রাহ্ম > ব্রাইহ্ম , কাচি > কাইচি, গীতি > গাইতি।
বর্তমানে কেবল পূর্ববঙ্গেই এইরূপ উচ্চারণ রীতি দৃষ্ট হয়, কিন্তু এক সময় পশ্চিমবঙ্গেও ইহা প্রচলিত ছিল।
৪। অভিশ্রুতি (Umlant বা Vowel Mutation) : অপনিহিত স্বরধ্বনি পূর্ববর্তী স্বরধ্বনির সহিত মিলিত হইয়া পরবর্তী স্বরধ্বনিকে বিকৃত করিলে অভিশ্রুতি হয়। যেমন, করিয়া > কইরা > করে, শুনিয়া > শুইনা > শুনে, বলিয়া > বইলা > বলে। পূর্ববঙ্গের কথ্য ভাষায় এই অভিশ্রুতিজনিত
স্বরধ্বনির পরিবর্তন দেখা যায় না। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের কথাভাষা বা চলিত ভাষার ইহা একটি লক্ষ্যণীয় বৈশিষ্ট্য। বর্তমান কালে সাধুভাষা অনুমোদিত রূপ চাহিয়া, থাকিয়া প্রভৃতি অভিশ্রুতির ফলে ‘চেয়ে» “থেকে’ ইত্যাদিরূপে সাধু ভাষায় গৃহীত হইয়াছে।
৫। য়-শ্রুতি ও ব-শ্রুতিঃ– কথা বলিবার সময় পদ মধ্যস্থিত ধ্বনিগুলি বিচ্ছিন্নভাবে উচ্চারিত হয় না। জিহ্বা বিশ্রাম না লইয়া অবিচ্ছিন্নভাবে একধ্বনির উচ্চারণ স্থান হইতে পরবর্তী ধ্বনির উচ্চারণ স্থানে যায়। অনেক সময় দ্রুত-উচচারণে এক ধ্বনির স্থান হইতে অপর ধ্বনির স্থানে যাইবার কালে জিহ্বা অসতর্কভাবে মধ্যবতী স্থানের কোন ধ্বনি উচ্চারণ করিয়া ফেলে ৷ এইরূপ মধ্যব্যঞ্জনাগমকে বলা হয় শ্রুতিধ্বনি (Guide)
যথা – বৈদিক সুনর > সুন্দর, বানর > বান্দর এখানে ন ও র – কারের মধ্যে দ-এর আগম হইয়াছে। বাংলায় পাশাপাশি অবস্থিত দুইটি স্বরধ্বনির দ্রুত উচ্চারণকালে উহাদের মধ্যে য়-ধ্বনির অথবা ব-ধ্বনির (ও) আগম হয়। উচ্চারণের সুবিধা ও শ্রুতিমাধুর্যের জন্য ইহাদের আগম ঘটিয়া থাকে। যেমন,খা + আ > খাআ > খাওয়া। কে এলো? এই বাক্য দ্রুত উচ্চারণে হয় “কেয়েলে’? অনেক সময় য়- শ্রুতি এবং ব-শ্রুতির মধ্যে অদল-বদল দেখা যায়। যথা, দেয়াল > দেওয়াল, ছায়া > ছাওয়া।
৬। বর্ণবিপর্যয় (Metathesis) : পদমধ্যস্থিত দুইটি ধ্বনির স্থান পরিবর্তনকে বলি বর্ণবিপর্যয়। যথা, হ্রদ > দহ, পিশাচ > পিচাশ, বাক্স > বাস্ক
৭। স্বরাগম : উচ্চারণের সুবিধার জন্য বা শ্রুতিমাধুর্যের জন্য পদস্থিত যুক্ত বা একক ব্যঞ্জনের পূর্বে স্বরধ্বনির আগমকে স্বরাগম বলে। পদাদিস্থিত যুক্ত বা একব্যঞ্জনের পূর্বে স্বরাগমকে আদি স্বরাগম বলে। যথা – স্ত্রী > ইস্তিরি, স্পর্ধা > আস্পর্ধা, কুমারী > অকুমারী। কখনও কখনও শব্দের অস্তস্বরধ্বনি যুক্ত হয়। ইহাকে অন্ত্যস্বরাগম বলে। যথা, ইং বেঞ্চ > বেঞ্চি, একটিং > একটিনি ইত্যাদি ৷ স্বরভক্তির ফলে শব্দ মধ্যস্থিত যুক্তব্যঞ্জনের মধ্যে যে স্বরাগম হয়, তাহাকে মধ্য – স্বরাগম বলা যাইতে পারে। যথা, মুক্ত > মুকুতা, বর্ষা > বরষা, বরিষা।
৮। সমীকরণ বা সমীভবন ( Assimilation) : শব্দের উচ্চারণ কালে অনেক সময় সনিকটস্থ
দুইটি বিভিন্ন ধ্বনি পরস্পর অথবা একে অপরের প্রভাবে পড়িয়া অল্পবিস্তর সাম্য লাভ করে। ইহাকে বলা হয় সমীকরণ বা সমীভবন। ইহা তিন রকমের হইতে পারে। যথা,
(১) প্রগত (Progressive) পূর্ববর্তী ধ্বনি পরবর্তী ধ্বনিকে বদলাইয়া দে? যথা – চক্র > চক্ক, পদ্ম > পদ্দ, গল্দা > গল্লা (চিংড়ি), চন্দন > চন্নন।
(২) পরাগত (Regressive) পরবতী ধ্বনি পূর্ববর্তী ধ্বনিকে পরিবর্তিত করে। যথা,
রাধনা > রান্না, নাতজামাই > নাজ্জামাই, গল্প > গপ্প।
(৩) পারস্পরিক বা অন্যান্য (Mutual) পরস্পরের প্রভাবে দুইটি ধ্বনিই পরিবর্তিত হইতে পারে। যথা, সত্য > সইচ্চ, তৎ +হিত > তদ্ধিত, উৎ +স্বাস > উচ্ছাস, মহোৎসব > মচ্ছব।
৯। অসমীকরণ বা বিষমীভবন (Dissimilation) : পদমধ্যস্থিত দুইটি সমধ্বনির মধ্যে একটি বদলাইয়া যায়। মনে রাখিতে হইবে যে, সমীভবনের মতো বিষমীভবনে ধ্বনিগুলি পরস্পর সংলগ্ন নহে, অল্প বিস্তর অন্তরিত। যথা, লাল নাল, শরীর শরীল, তরবার তরোয়াল।
১০। বর্ণদ্বিত্বঃ জোরের সহিত বলিবার জন্য কখনও কখনও পদমধ্যস্কিত ব্যঞ্জনবর্ণকে দ্বিত্ব করা হয়। ইহাকে বর্ণদ্বিত্ব বলে। যথা, ছোট > ছোট্ট, পাকা > পক্ক, রতি?> রত্তি, সবাই > সব্বাই, কখনো > কখখনো।
১১। বর্ণলোপ : অনেক সময় দেখা যায়, শ্বাসাঘাতের অভাবে বা একই বর্ণের পাশাপাশি সমাবেশ ঘটিলে অক্ষরস্থিত স্বরধ্বনির কিংবা ব্যঞ্জনধ্বনির বিলোপ ঘটে ইহাকে বলা হয় বর্ণলোপ। যথা, অলাবু > লাউ, উদ্ধার > ধার (আদিস্বর লোপ); নাতিনী নাতনী, নারিকেল > নারকেল (মধ্যস্বরলোপ); জল > জল্ , সন্ধা > সাঝ, আকাশ >আকাশ্ অগ্নি > আগুন্ (অস্ত্যস্বরলোপ)।
১২। শব্দ মধ্যস্থিত র -কার ও হ -কার লোপ : শব্দমধ্যে অন্য ব্যঞ্জনবর্ণের পূর্বে যে র-কার
(রেফ) থাকে, চলিত বাংলায় উচ্চারণকালে তাহা অনেক সময় লুপ্ত হইয়া যায়। ঠিক এইরূপভাবে দুইস্বরের মধ্যবর্তী হ – কার সহজেই লুপ্ত হইয়া থাকে। (১) র-কার লোপ – করতো > কত্তে, কর্তা > কতা, শিরনী > শিণ্ণী; (২) হ-কার লোপ – ফলাহার » ফলার, পুরোহিত > পুরুত, বাহির > বার।