বিশিষ্টার্থক শব্দ, শব্দগুচ্ছ, বাগ্বিধি-বাগধারা, বাগধারা, বাংলা ইডিওমস, বাংলা ব্যাকরণ, ইডিওমস, bengali idiom, bangla idiom, baghdhara, bagbidhi, idiom,
বাগ্বিধি বাগধারা সব ভাষারই এক বিশেষ সম্পদ প্রত্যেক ভাষাতেই কিছু না কিছু বিশিষ্ট
অর্থ প্রকাশক বাক্যাংশ দেখিতে পাওয়া যায়।
• বিশিষ্টার্থক শব্দ বা শব্দগুচ্ছ (Idiom) কাহাকে বলে?
উত্তরঃ- সাধুভাষায় ব্যবহার্য বিশিষ্টার্থে বাক্যাংশের সংখ্যা খুব বেশী না হইলেও কথ্য ভাষায় ইহাদের সংখ্যা অজস্র। ইংরাজী ভাষায় যাহাকে Idioms বলে, বাংলা ভাষায় তাহাকেই বিশিষ্টার্থক শব্দ বা শব্দগুচ্ছ বলে।
এইসব বিশেষ বিশেষ শব্দ বা বাক্যাংশ বেশীর ক্ষেত্রেই হাটের, বাটের লোকের মুখে মুখে তৈরী হয়। সবসময় ইহা ব্যাকরণের নিয়ম মানিয়া চলে না।
১। অকাল কুষ্মাণ্ড (অকর্মণ্য):- ছেলেটা এমন ‘অকাল ‘কুষ্মাণ্ড’ যে ওকে দিয়ে কোন কাজই হয় না।
২। অমাবস্যার চাঁদ (যাহাকে প্রায় দেখা যায় না):- তুমি যে আজকাল ‘অমাবস্যার চাঁদ’ হয়ে উঠেছ দেখা পাওয়াই ভার।
৩। অরণ্যে রোদন (বৃথা কান্না) :- নির্মম লোকের কাছে দয়া ভিক্ষা করে লাভ নেই, অরণ্যে রোদন’ই সার।
৪। অর্ধচন্দ্র দেওয়া (গলাধাক্কা দেওয়া):- ওর মত অসভ্য ছেলেকে ‘অর্ধচন্দ্র দিয়েই’ তাড়ানো উচিত।
৫। আদায় কাচকলায় (পরস্পর বৈরীভার):- পিতার মৃত্যুর পর দুই ভাইতে একেবারে ‘আদায় কাচকলায়’ মুখ দেখাদেখিও বন্ধ।
৬। আক্কেল সেলামী (নির্বুদ্ধিতার দণ্ড):- পরের জিনিস হারিয়ে যাওয়াতে অনেকগুলি টাকা ‘আক্কেল সেলামী’ দিতে হোল।
৭। আকাশ কুসুম (অসম্ভব কল্পনা):- আমার পক্ষে কলকাতায় বাড়ী কেনা ‘আকাশ কুসুম’ ছাড়া আর কি?
৮। ইচড়ে পাকা (অকালপক্ক):- ছেলেটি একেবারে ‘ইচড়ে পাকা’ এই বয়সে যত পাকা পাকা কথা ওর মুখে।
৯। উত্তম-মধ্যম (প্রহার):- চোরটাকে ধরে বেশ করে ‘উত্তম-মধ্যম’ দিয়ে বিদায় করে দাও।
১০। উলুবনে মুক্তো ছড়ানো (অস্থানে মূল্যবান উপদেশ দেওয়া):- ছোটদের অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গীতচিন্তা সম্বন্ধে বক্তৃতা দিতে গেলে ‘উলুবনে মুক্তো’ ছড়ানো হবে।
১১। একচোখা (পক্ষপাতদুষ্ট):- অনেক লোক দেখেছি, কিন্তু তোমার মত ‘একচোখা মানুষ আর একটিও দেখি নি।
১২। একাদশে বৃহস্পতি (সুমসময়):- রমেনবাবু আজকাল নানা দিক দিয়ে টাকা রোজগার করছেন তারতো এখন ‘একাদশে বৃহস্পতি’।
১৩। এক ঢিলে দুই পাখী মারা (এক প্রচেষ্টায় দুই টি কাজ সম্পন্ন করা):- দু’পক্ষই আমার সাহায্য চায়, এমন একটা মতলব বের করতে হবে যাতে ‘এক ঢিলে দুই পাখী মরে’।
১৪। ওজন বুঝে চলা (নিজের মর্যাদা সম্বন্ধে সচেতন):- বেশী খরচ করো, না নিজের ‘ওজন বুঝে চলতে’ না পারলে অসুবিধেয় পড়তে হবে।
১৫। কলির সন্ধ্যা (দুর্দিনের আরম্ভ):- সবতো ‘কলির সন্ধ্যা’ আরও কত কি দেখতে হবে।
১৬। কলুর বলদ (স্বাধীন চিন্তাহীন):- ‘কলুর বলদের’ মত না চলে একটু নিজের বিদ্যেবুদ্ধি খাটাও।
১৭। কান পাতলা (যাহা শোনে তাহাই বিশ্বাস করে):- এমন ‘কান পাতলা’ লোকের কাছে কথাটা না বললেই ভালো হত, উনি হয়তো এটাকে সত্যি বলেই ধরে নেবেন।
১৮। কুপমণ্ডুক (সীমাবদ্ধ জ্ঞান):- গ্রামে থাকার ফলে হরি একেবারেই ‘কূপমণ্ডুক’ বনে গেছে। আজকের দুনিয়ায় কি হচ্ছে, সে কোন খবরই রাখে না।
১৯। খাল কেটে কুমীর আনা (নিজের কর্মদ্বারা শত্রুকে সুযোগ দান):- মীরজাফর, জগৎশেঠ প্রভৃতি ব্যক্তিরা ইংরাজের পক্ষে যোগ দিয়ে ‘খাল কেটে কুমীর এনেছিলেন’ ইংরেজরা শেষে দেশটাই গ্রাস করলো।
২০। গড্ডালিকা প্রবাহ (দলপতিকে অন্ধভাবে অনুসরণ) :- ‘গড্ডালিকা প্রবাহে’ গা না ভাসিয়ে নিজের বৈশিষ্ট্য রক্ষার চেষ্টা করা উচিত।
২১। গায়ে গায়ে শোধ (দেয় না দেওয়া, এবং প্রাপ্য না লওয়া অথচ দেনা পাওনার পরিশোধ):- তুমি আমার কাছে যে পঞ্চাশ টাকা পাবে, তা খোরাকি বাবদ খরচ করে, ‘গায়ে গায়ে শোধ’ দিতে চায়।
২২। গৌফ-খেজুরে (অত্যন্ত অলস):- কুটোটি ভেঙ্গে দুখানা করতে পারে না, এমন ‘গৌফ খেজুরে’ লোকের ওপর কাজের ভার দিয়ে নিশ্চিত হওয়া যায় না।
২৩। গোবর-গণেশ (জড়প্রকৃতি):- ছেলেটিকে চালাক মনে করেছিলুম, কিন্তু এখন দেখছি একটি ‘গোবর-গণেশ’, বুদ্ধিশুদ্ধি কিছুই নেই।
২৪। ঘরভেদী বিভীষণ (বিশ্বাসঘাতক):- ‘ঘরভেদী বিভীষণ’ হয়ে ছোট ভাইটিই শেষকালে দাদাকে পুলিশের হাতে ধরাইয়া দিল।
২৫। ঘোড়ার ডিম (কিছুই নয়, অলীক বস্তু):- বৃথাই এতক্ষণ চেঁচিয়ে মরলুম, তুমি ‘ঘোড়ার ডিম’ বুঝেছ।
২৬। চক্ষুদান (চুরি করা):- ড্রয়ার খুলে কে যে ঘড়িটার ‘চক্ষুদান’ করেছে বুঝতে পারলাম না।
২৭। চোখের বালি (চক্ষুশূল) :- একদিন তুমি আমাকে না দেখে থাকতে পারতে না; কিন্তু আজ আমি হয়েছি তোমার ‘চোখের বালি’।
২৮। ছাই ফেলতে ভাঙ্গা কুলো (অতি সামান্য কাজের জন্য নিযুক্ত ব্যক্তি):- আমিতো আছিই, আর কেউনা আসে আমাকেই নাহয় ডেকো।
২৯। জিলিপির প্যাচ (কুটিল বুদ্ধি):- লোকটা মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে বটে, কিন্তু পেটের ভেতর ‘জিলিপির প্যাচ’।
৩০। টাকার কুমীর (অগাধ টাকার মালিক):- শুনেছি চোরা কারবার করে সে রাতারাতি ফেঁপে উঠে একেবারে ‘টাকার কুমীর’ হয়ে বসেছে
৩১। ডুমুরের ফুল (যাহা প্রায় দেখা যায় না):- তোমার যে দেখাই পাই নাই। দিন দিন যেন ‘ডুমুরের ফুল’ হতে চলেছ।
৩২। তীর্থের কাক (দীর্ঘ প্রতিক্ষাকারী):- চাকরীর উমেদারী করতে গিয়ে অনেককেই বড়লোকের দোরগড়ায় ‘তীর্থের কাক’ হয়ে বসে থাকতে হয়
৩৩। ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির (বিদ্রুপে মিথ্যাবাদী বলা):- একেবারে ‘ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির’ যে নিজের কাজের জন্য এটুকু মিথ্যে বলিতে পারেন না।
৩৪। ননীর পুতুল (শ্রমকাতর ব্যক্তি):- এমন ‘ননীর পুতুল’ ছেলেকে দিয়ে কি হবে? একটুখানি কষ্টও সহ্য করতে পারে না।
৩৫। পুকুর চুরি (বিরাট ফীকি):- মালিকের অসাবধানতার ফলে কর্মচারীরা মিলে একেবারে ‘পুকুর চুরি’ করে ব্যবসাটাকে নষ্ট করে দিয়েছে।
৩৬। পোয়া বারো (সর্ববিষয়ে লাভ):- বড়বাবুর অনুপস্থিতে কর্মচারীদের এখন ‘পোয়া বারো’, সবাই মিলে এখন পুকুর চুরি করতে লেগেছে
৩৭। বকধার্মিক (ভন্দ) :- ফৌটা-তিলক কপালে এঁ লোকটাকে ‘বকধার্মিক’ বলে মনে হয়; একটু সাবধানে থাকা ভালো
৩৮। বালির বীধ (ক্ষণস্থায়ী) বড়র পীরিতি ‘বালির বাঁধ’ ক্ষণে হাতে; দড়ি ক্ষণেতে চাঁদ।
৩৯। বুদ্ধির ঢেঁকি (নিরেট বোকা):- লোকটা একেবারে ‘বুদ্ধির টেকি’ এক বলতে আর এক বোঝে।
৪০। ব্যাঙের আধুলি (অতি সামান্য ধন):- আমার এই ‘ব্যাঙের আধুলি’ তোমার কোন কাজে লাগবে!
৪১। ভিজে বেড়াল (ভণ্ড):- লোকটা একেবারে ‘ভিজে বেড়াল’ বাইরে বেশ ভালো, কিন্তু পেটে পেটে বদ মতলব।
৪২। মাটির মানুষ (অতি নিরীহ ব্যক্তি):- মা-টি-তো মাটির মানুষ, তার আবদারে ছেলেটি একেবারে মাটি হয়ে গেল।
৪৩। যখের ধন (কৃপণের সঞ্চিত ধন):- সারা জীবন তিনি ‘যখের ধনের’ মত সম্পত্তি আগলে রইলেন; শেষ পর্যন্ত তার টাকা-কড়িও ভোগেই লাগননা।
৪৪। রাবণের চিতা (অনির্বাণ অন্তর্দাহ):- একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বিধবা মহিলাটির বুকে যে ‘রাবণের চিতা’ জ্বলছে, তা আর কোনদিন নিববে না।
৪৫। শাঁখের করাত (উভয় সঞ্চট):- তাকে ভালো বললে সন্দেহ করে মন্দ বললে রেগে যায়; লোকটা একেবারে ‘শাঁখের করাত’– যেতেও কাটে আসতেও কাটে।
৪৬। সোনায় সোহাগা (পরস্পর সহায়ক দুই ব্যক্তি বা বস্তু):- ছেলেটির যেমন সুন্দর চেহারা, তেমনি অশেষ গুণ; যেন ‘সোনায় সোহাগ’।
৪৭। হাতে মাথা কাটা (যথেচ্ছাচার করা):- তার মত অহঙ্কারী লোক যদি আপিসের বড়বাবু হন, তবে তিনি তার অধীনস্থ কর্মচারীদের ‘হাতে মাথা কাটবেন’।
৪৮। হাটে হাড়ি ভাঙ্গা (গোপন ব্যাপার ফাস করিয়া দেওয়া):- আমাকে রাগিও না, তাহলে ‘হাটে হাড়ি ভেঙ্গে’ দেব– তখন আর মুখদেখাতে পারবে না।
৪৯। থ হয়ে যাওয়া (আশ্চর্য হওয়া):- ওইটুকু ছেলের মুখে এমন পাকা পাকা কথা শুনে আমি তো ‘থ’ হয়ে গেলাম”।
৫০। দুকান কাটা (অতুলনীয় বেহায়া):- বিনুর মত ‘দুকান কাটা’ ছেলে আমি দেখি নি, মুখের ওপর বাড়ী ঢুকতে বারণ করল তারপরেও আবার ওদের বাড়ী যায়।
৫১। দক্ষযজ্ঞ ব্যাপার (বিশৃঙ্খল কাণ্ড):- সভায় গিয়ে দেখি, সে এক ‘দক্ষযজ্ঞ ব্যাপার’, সবাই মিলে চেঁচামেচি হাতাহাতি সুরু করে দিয়েছে।
৫২। ঝিকে মেরে বৌকে শেখানো (পরোক্ষ শাসন করা):- ছেলেকে মেরে উনি ভাইকে শিক্ষা দিতে চাইলেন। ও রকম ‘ঝিকে মেরে বৌকে শেখানোর’ কি দরকার?
বাগ্বিধি বাগধারা বা বাগভঙ্গী।। বিশিষ্টার্থক শব্দ বা শব্দগুচ্ছ।। Bengali Idiom
বাগ্বিধি বাগধারা
আরোও পড়ুন