চরণে প্রণাম পাঠের প্রশ্ন উত্তর, পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা অসম পাঠ নং -১২, Class 5 Bengali Lesson 12, Class V Bengali Question Answer Assam.
(toc)
কবিতাটি শুদ্ধ এবং স্পষ্ট উচ্চারণে পড়ো কবিতাটি আবৃত্তি করো৷
উত্তরঃ-
চরণে প্রণাম
উত্তর লেখো।
(ক) ছোটো পাখি কোথা থেকে মিষ্ট গান শিখলো?
উত্তরঃ- ছোটো পাখিকে যে তার প্রাণ
দান করেছেন সেই পরম করুণাময় ঈশ্বরের কাছ থেকে সে মিষ্টি গান শিখেছে।
(খ) রাঙা ফুলের মুখে হাসি কে দিয়েছেন?
উত্তরঃ- জল, স্থল সহ সমগ্র পৃথিবী
যিনি সৃষ্টি করেছেন সেই ঈশ্বর রাঙা ফুলের কচি মুখে হাসি ফুটিয়েছেন।
(গ) খুকুরানির বিছানায় শিয়রের কাছে কে বসে থাকেন?
উত্তরঃ- জগৎ জননী অর্থাৎ
জগতের জননী খুকুরাণির বিছানায় শিয়রের কাছে বসে থাকেন।
কবিতার কথাগুলো নিজের মতো করে লেখো।
উত্তরঃ- বিচিত্র সৃষ্টি সম্ভারে
পরিপূর্ণ এই বিশ্বচরাচর। পশুপাখি, গাছ-পালা, নদী, সমদ্রের বৈচিত্র্যে এক অপরূপ
পরিবেশ গড়ে উঠেছে ধরাধামে।
প্রকৃতি আমাদের শিক্ষাদাতা, আকাশ শুধু আয়তনে বিশাল ও অন্তহীন নয় – সেই
উদারও। গ্রহ নক্ষত্ররাজিকে সে ভালোবাসার এক অচ্ছেদ্য বন্ধনে যুগ যুগ ধরে
রেখেছে। তাই আকাশের বুকে ভাসমান মেঘ থেকে
ঝরে বৃষ্টি- সমস্ত উদ্ভিদ ও
প্রাণীজগতের কাছে নির্মল এই জলধারার গুরুত্ব অপরিসীম। জলই তো জীবের জীবন। এই জল
দান করা আকাশের পক্ষে সম্ভব হয় তার মহত্ব গুণে। একই ভাবে মানুষের জীবনে যদি থাকে
অ-প্রতারণা এবং কোনো না কোনো জীবনাদর্শের দৃঢ়তা হৃদয় আপনা থেকেই বড়ো হয়ে ওঠে।
তখন সেই উদার হৃদয় থেকেই ভালোবাসা ঝরে পড়ে। ভালোবাসা যেমন অন্যের জীবনকে মধুময়
করে তেমনি নিজের জীবনেও নিয়ে আসে মানসিক প্রশান্তি। অথচ তাকে অচ্ছ্যুৎ করে,
বিভেদের দেওয়াল তুলে মঙ্গলের নামে অমঙ্গল আনি আমরা। মহৎ ব্যক্তিরা বাস্তব জীবনের
ব্যথা বেদনাকে নীলকণ্ঠের মতো আত্মসাৎ করে মানুষকে বিলিয়ে যান অমেয় সৌন্দর্য ও
অনাবিল ভালোবাসা।
নীচের শব্দগুলোর অর্থ শব্দ-সম্তার দেখে লেখো।
কৃপা = দয়া।
ক্ষুদ্র = ছোটো।
শিয়রে = মাথার কাছে।
জগৎ =
পৃথিবী।
জননী = মা।
স্থল = ডাঙা৷
শিক্ষক/শিক্ষয়িত্রীর কাছ থেকে নীচের পংক্তিগুলোর তাৎপর্য বুঝে নিয়ে লেখো
‘ফুল, পাখি, খুকুরানি তোমরা সকলে
কত ভালো কথা আজ আমারে শুনালে।
সকলের
প্রতি এত ভালোবাসা যীর,
চরণে তাহার কোটি প্রণাম আমার।’
উত্তরঃ- বিশ্বসংসার বিশ্বপিতারই কারবার। এখানে মানুষের কর্ম দিয়ে তিনি জগৎকে
পরিচালনা করেন। সমগ্র দুনিয়ার নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি অলক্ষ্যে বসে। তার নির্দেশে
জগতের সকলে নিজের নিজের কাজ করে
যায়। স্রষ্টা নিজে প্রচ্ছন্ন থেকে মানুষের
মধ্য দিয়ে নিজের মহিমার বিকাশ ঘটান।বাস্তবজগতে ব্যবসায়ী যেমন মূলধন খাটিয়ে তার
ব্যবসা বা কারবারের শ্রীবৃদ্ধি ঘটান, বিশ্বপিতাও তেমনি সকলকে মূলধন হিসাবে
খাটিয়ে
জগৎকে বাসের উপযোগী এবং ঐশ্বর্যশালী করে তুলেছেন। ঈশ্বর সর্বব্যাপী। তিনি সব
জীবের মধ্য দিয়ে, সর্বস্থানে নিজেকে প্রকাশ করে চলেছেন।
খ – ভাষাঅধ্যয়ন (ব্যবহারিক ব্যাকরণ)
বাক্য রচনা করো।
জল-স্থল = ব্যাঙ জল-স্থল দুই জায়গাতেই বাস করে।
খুকুরানি = খুকুরানি রোজ
ভোরবেলায় ঘুম থেকে ওঠে।
জগৎ-জননী = জগৎ-জননী সর্বদা খুকুরানির শিয়রে
থাকে৷
রাঙা ফুল = রাঙাফুল -এর কচি মুখে ঈশ্বর হাসি ফোটান।
মিষ্ট গান =
পাখি মিষ্টি গান করে৷
নীচের শব্দগুলোর সমার্থক শব্দ লেখো। (দলে আলোচনা করবে)
উদাহরণ- ফুল – পুষ্প, কুসুম
পাখি = বিহঙ্গ, খেচর।
অন্ধকার = আঁধার, তমাসা।
রাত = রজনী,
যামিনী, নিশা৷
জগৎ = ধরণী, পৃথিবী, বিশ্ব৷
এসো, জানি।
‘ক’ থেকে ‘ম’ পর্যন্ত পঁচিশটি ব্যঞ্জনবর্ণকে পাঁচটি বর্গে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি বর্গে রয়েছে পাঁচটি করে বর্ণ। ‘ক’ বর্ণ দিয়ে শুরু বর্গকে বলা হয় ‘ক’ বর্গ। চ’ দিয়ে শুরু বর্গকে বলা হয় ‘চ’ বর্গ।
‘ক’ বর্গে ক, খ, গ, ঘ, ঙ পাঁচটি ব্যঞ্জজনবর্ণ রয়েছে। এবার নীচের খালি ঘরগুলো ব্যঞ্জনবর্ণ দিয়ে পূর্ণ করো এবং কোন বর্গে কোন কোন বর্ণ আছে লক্ষ করো।
ক-বর্গঃ ক, খ, গ, ঘ, ঙ
চ-বর্গঃ চ, ছ, জ, ঝ, ঞ
ট-বর্গঃ ট, ঠ, ড, ঢ, ণ
ত-বর্গঃ
ত, থ, দ, ধ, ন
প-বর্গঃ প, ফ, ব, ভ, ম
এসো জানি
আমাদের বর্ণমালায় দুই ধরনের ‘জ’ রয়েছে- একটি ‘জ’ আরেকটি ‘য’। গ্রথমটিকে বলা হয় বগীয় ‘জ’ আর দ্বিতীয়টিকে অন্তঃস্থ ‘য’। প্রথমটির স্থান বর্গের মধ্যে, তাই বগীয়; আর দ্বিতীয়টির স্থান বর্গের বাইরে।
ঁ চন্দ্রবিন্দু এর প্রয়োগ।
ঁ চন্দ্রবিন্দু – অনুনাসিকের চিহ্ন। কোন বর্ণের ওপর চন্দ্রবিন্দু থাকলে তা নাসিকা সংযোগে উচ্চারিত হয়৷ যেমন- দাঁত, শাঁখ হাঁস,বাঁশি ইত্যাদি।
যে তৎসম শব্দে বর্গের পঞ্চম বর্ণ ঙ, ঞ, ণ, ন, ম প্রভৃতির সঙ্গে অন্য ব্যঞ্জনবর্ণ যুক্ত থাকে, বাংলায় সেই সকল শব্দের বর্গীয় পঞ্চম বর্ণ লোপ পায় এবং পরবর্তী স্বরবর্ণ চন্দ্রবিন্দু যুক্ত হয়ে দীর্ঘ হয়। যেমন – পঙ্ক -> পাঁক, কণ্টক -> কাঁটা, অঞ্চল -> আঁচল।
তৎসম শব্দে ং থাকলে বাংলায় সেই অনুস্বার লোপ পায় এবং পূর্ববর্তী স্বর চন্দ্রবিন্দু যুক্ত হয়ে দীর্ঘ হয়। যেমন – বংশ -> বাঁশ, হংস -> হাঁস।
বানানে সংস্কৃতের রূপ অবিকৃত রেখে যেসব শব্দকে বাংলায় গ্রহণ করা হয়েছে সেগুলোকে তৎসম শব্দ বলে।
উদাহরণে যে ভাবে দেখানো হয়েছে সেইভাবে নীচের শব্দগুলোর অর্থ প্রকাশ করে বাক্য রচনা করো।
যেমন, শয্যা (বিছানা) – ভোরে শয্যা ত্যাগ করা উচিত।
সজ্জা (সাজ পোশাক) –
যুদ্ধ সজ্জায় সজ্জিত হয়ে সৈনিক রওনা হলেন।
শব্দ | অর্থ | বাক্য |
কোটি | একশো লাখ | আকাশে কোটি কোটি নক্ষত্র দেখা যায়৷ |
কটি | কোমর | সৈনিকটির কটিতে অস্ত্র আছে৷ |
রাঙা | রঙে রঙিন করা/রাঙানো | উদিত সূর্যের আলোয় আকাশটি রাঙা হল। |
রাঙা | লাল | বালিকাটি রাঙা শাড়ি পরে আছে৷ |
গ – জ্ঞান-সম্প্রসারণ
চরণে প্রণাম পাঠের প্রশ্ন উত্তর
কবি বলেছেন– সকলের প্রতি এত ভালোবাসা, যার, চরণে তাহার কোটি প্রণাম আমার ।’
কবি এখানে সকলের প্রতি কার ভালোবাসা বোঝাচ্ছেন? তুমি তাঁর ভালোবাসা বুঝতে পার কি? সেই ভালোবাসার কথা তুমি অনুভব করো এবং সেই অনুভবগুলো নিজের খাতায়ে লেখো।
উত্তরঃ- কবি এখানে সকলের প্রতি ঈশ্বরের ভালোবাসা বোঝাচ্ছেন। হ্যাঁ, অবশ্যই আমি তাঁর ভালোবাসা বুঝতে পারি।
শ্রষ্টার প্রকাশ সৃষ্টিতে। তিনি সব কিছুর মধ্যে বিরাজিত। প্রীতিময় সংসার। সংসারে প্রতিটি মানুষের মধ্যেই ঈশ্বরের অস্তিত্ব। ‘যত্র জীব তত্র শিব’- একমাত্র ভালোবাসা দিয়েই ‘একসুত্রে’ গাথা সম্ভব। জীব মাত্রকেই যিনি পরমাত্মার অংশ মনে করেন। তাঁর সেবা ও কল্যাণ সাধনকেই যিনি জীবনের শেষ্ঠ ব্রত বলে মনে করেন, সুখে দুঃখে সর্ব অবস্থায় যিনি প্রতিপদে ঈশ্বরকে স্মরণ করেন সাধু-সজ্জনকে যিনি সেবায় তৃপ্ত করেন তিনিই একমাত্র তাঁর অস্তিত্ব টের পান’৷ স্থামীজির মতে পরার্থে এতটুকু করলে ভিতরের শক্তি জেগে ওঠে। পরের জন্য এতটুব ভাবলে, ক্রমে হৃদয়ে সিংহবলের সঞ্চার হয়। এ জগতে যা কিছু সুন্দর, যা কিছু কল্যাণকর, যা ‘কিছু মঙ্গলময় তা ঈশ্বরের ইচ্ছাধীন। চন্দ্র, সূর্য, বাতাস সবই ঈশ্বরের ইচ্ছায় কাজ করে। ভগবান চান তাই ফুল হাসে, পাখি গান গয়, সমুদ্রে ঢেউ ওঠে, মানুষ আনন্দ পায়, রৌদ্রোজ্জ্বল দিন আসে, ঋতু বদলায়, প্রকৃতির রূপের পরিবর্তন হয়। আকাশের রঙ বদলায়, ঘাসের উপর শিশির পড়ে। বিশ্বের এই সর্ববিছুর অংশীদার আমিও।
ঘ – প্রকল্প
তোমার পরিচিত একটি পাখির বিষয়ে রচনা লেখো।
উত্তরঃ- বাংলাদেশ চালাক চতুর
বুদ্ধিমান পাখি হিসেবে কাক পরিচিত। কাক ডাকা ভোরের কথা আমরা সবাই জানি। কাকের
রয়েছে দুটি পা, দুটি কালো ডানা, কালো মসৃণ পালকের একটি লেজ, একটি শক্ত
ঠোঁট।
প্রতিটি পায়ে রয়েছে চারটি করে ধারালো নখযুক্ত আঙুল। এ ছাড়াও রয়েছে
তার ঠোটের ভিতরকার লাল রং।
কাক প্রধানত দু-জাতের – দাঁড় কাক এবং পাতি কাক৷ দাঁড় কাক পাতিকাকের
চেয়ে
আকারে একটু বড়ো।
প্রকৃতি – কাকের চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল চাতুর্য। গৃহস্থের খাদ্যসামগ্রী
চুরি করার অপবাদ কাকের আছে। অনেক সময় জিনিস অসাবধানে রাখলে কাকের জ্বালায় তার
ফল ভোগ করতে হয়। এরা বিপদের দিনে খুবই একতাবদ্ধ। এদের কারও কিছু হলে
কা-কা
রবে সকলকে জড়ো করে৷
উপকারিতা – ইতর প্রাণী হলেও সমাজবদ্ধ জীব হিসাবে কাকের খ্যাতি রয়েছে৷ রাস্তাঘাটের যত নোংরা খাবার, মরা পশু-পাখি সব কিছু পরিষ্কার করার দায়িত্ব যেন কাকের। কাক সব কিছু খায় – মাছ, মাংস, ভাত, পিঠে, মিষ্টি থেকে শুরু করে মরা ইঁদুর ছানা পর্যন্ত। তাই আমাদের অবহেলায় পড়ে থাকা নোংরাকে কাক নিজে পরিষ্কার করে। সেইজিন্য কাক ঝাড়ুদার পাখি রূপে পরিচিত।
অপকারিতা- নোংরা পরিষ্কার করার খ্যাতি থাকলেও কতগুলো দোষ আমাদের বড্ড বিরক্ত করে। নোংরা জিনিষ ঠুকরে সেই ঠোঁট দিয়ে গৃহস্থ বাড়ির জলভরতি চৌবাচ্চা কিংবা বালতি থেকে জল খেতে শুরু করে তখন পচা জিনিসের নানান রোগজীবাণু ছড়িয়ে দেয়। তাছাড়া অতর্কিতে কোনো জিনিস চুরি করে সে অনেক সময় বেশ ক্ষতি করে বসে। ফলে মানুষ কাকের এই বদ স্বভাবের জন্য তাকে মোটেই সহ্য করতে পারে না।
পরবর্তী পাঠ- ১৩ পালা গানের কথা