আমাদের দেশের যাতায়াত ব্যবস্থা- ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে যাতায়াতের জন্য বহু রাষ্ট্রীয় সড়কপথ, রেলপথ, জলপথ এবং আকাশ পথ ব্যবহার করা হয়। এই পথগুলোতে বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের সহায়তায় ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এবং অন্য দেশে যাওয়াও সম্ভব হয়েছে। এটিই হচ্ছে আমাদের দেশের অর্থাৎ ভারতের পরিবহন ব্যবস্থা (Transport system of India) ।
ভারতের রেল পরিবহন ব্যবস্থা (Railway transport system of India):
রেল পরিবহন (Indian Railway) হল ভারতবর্ষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন ব্যবস্থা। ভারতবর্ষে ব্রডগজ ও মিটার গজ এই দুই প্রকারের রেলপথের ব্যবস্থা আছে যদিও পাহাড়ি অঞ্চলে ন্যারোগজ রেলপথও আছে। উত্তর পূর্ব ভারতের মেঘালয় ও সিকিমে এখনও রেলপথের ব্যবস্থা হয় নি। অসমে ১৮৮২-১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দে ডিব্রু-শদিয়া রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছিলো । এই রেলপথটি অসমের প্রথম রেলপথ । ক্রমান্বয়ে রেলপথের সম্প্রসারণ করে বর্তমান অসমের বিভিন্ন প্রান্তের প্রত্যেক জেলার মধ্যে রেলপথের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অসম থেকে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে যাতায়াতের জন্য রেল পরিবহনের সুব্যবস্থা আছে।
রেলপথের সাহায্যে প্রতিদিনই জিনিসপত্র এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া সহজ হয়েছে। মানুষ কম সময়ে এবং কম খরচে অনেক দূর-দূরান্তে যাওয়া-আসা করতে পারছে। প্রথমে রেলগাড়ি বাষ্পীয় ইঞ্জিনের সাহায্যে চালানো হয়েছিলো । বর্তমানে ডিজেল ও ইলেকট্রিক ইঞ্জিনের সাহায্যে অতি দ্রুত বেগে রেলগাড়ি চালানো সম্ভব৷
ভারতের পথ পরিবহন ব্যবস্থা (Road transport system of India) :
ভারতের পথ পরিবহন ব্যবস্থার অন্তর্গত পথগুলো হল- রাষ্ট্রীয় সড়কপথ, সীমান্ত সড়কপথ, রাজ্য এবং আন্তঃরাজ্য সড়ক পথ গ্রামাঞ্চলের পথ ও পৌর নিগমের পথ। পথ পরিবহন ব্যবস্থাই আমাদের যাতায়াত এবং জিনিস পত্র এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাকে সহজ করে তুলেছে।
উত্তর ভারতের মানালি-লেহ রাষ্ট্রীয় সড়কপথ পৃথিবীর মধ্যে সর্বোচ্চ পথ পরিবহন ব্যবস্থা।
বর্তমান অসমে প্রায় ৪২,৬৪১ কিলোমিটার পথ নির্মাণ করা হয়েছে। এই পথগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সড়কপথ, জেলা পূর্তপথ, জেলা এবং পঞ্চায়েত পথবা রাস্তা ৷ রাষ্ট্রীয় সড়ক পথগুলো অসমকে ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে।
ভারতের জল পরিবহন ব্যবস্থা (Water transport system of India) :
ভারতবর্ষের জলপথকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। আন্তঃদেশীয় এবং উপকূলীয় বা সামুদ্রিক জল পরিবহন।
ভারতের তিনটি রাষ্ট্রীয় জলপথ হল-
(১) গঙ্গা-ভাগিরথী হুগলি নদীর জল পরিবহন ব্যবস্থা৷
(২) ব্রহ্মপুত্রের সদিয়া-ধুবড়ি জল পরিবহন ব্যবস্থা।
(৩) পশ্চিম উপকূলীয় জল পরিবহন ব্যবস্থ।
ভারতে ১২ টি প্রধান জাহাজ বন্দর আছে। এর মধ্যে চারটি বন্দর হল – মুম্বাই, চেন্নাই, বিশাখাপত্তনম ও কলকাতা।
বর্তমানে ব্রহ্মপুত্র নদীর জাহাজঘাটগুলো হল – ডিব্রুগড়, দিসাংমুখ, নিমাতিঘাট, বিশ্বনাথ চারিআলি, গুয়াহাটি, গোয়ালপাড়া ও ধুবড়ি।
ভারতের আকাশ পথ পরিবহন (Air Transport in India) :
ভারতবর্ষের বিমান সেবা সরকারি ও বেসরকারি খণ্ডের অন্তর্গত। এয়ার ইন্ডিয়া (Air India) বিমান সেবা সরকারি খণ্ডের অন্তর্গত বিমান সংস্থা ইন্ডিগো (Indigo), স্পাইস জেট (Spice Jet) ইত্যাদি বেসরকারি খণ্ডের অন্তর্গত। এই বিমান সেবার মাধ্যমে ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানের সঙ্গে দ্রুত পরিবহন সম্ভব হয়েছে। ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাস থেকে গুয়াহাটি ও দিল্লির মধ্যে বিমানচলাচল আরম্ভ হয়। কয়েকটি বিমান সংস্থার সাহায্যে বিদেশেও যাওয়া যায়।
কেরালার কোচিনে ভারতের প্রথম ব্যক্তিগত খণ্ডের আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর গড়ে ওঠেছে ।
ভারতের রশি-পরিবহন ব্যবস্থা (Rope Transportation System of India) :
ভারতে রজ্জু পথ বা রশি-পরিবহনের ব্যবস্থাও আছে। রশি পরিবহন ব্যবস্থার খরচ কম। পাহাড় দুর্গম অঞ্চলে খনি থেকে চুনাপাথর, কয়লা ইত্যাদি খনিজ পদার্থ উত্তোলন করতে এই ব্যবস্থার সাহায্য নেওয়া হয়। অসমের কার্বি আংলং এর ডিলাই পাহাড়ে ও বোকাজান সিমেন্ট উদ্যোগের মধ্যে চুনাপাথর বহন করার জন্য প্রায় ৩৫ কিমি দূরত্বের একমাত্র রজ্জ্ব পরিবহন ব্যবস্থাটি আছে। গুয়াহাটিও উত্তর গুয়াহাটির মধ্যে রজ্জু পথটি পর্যটকের আকর্ষণ স্থল হয়ে উঠেছে।
এই পরিবহন ব্যবস্থাগুলোর দ্বারা আমাদের পৃথিবীর যেকোনো স্থানে সহজে ও কম সময়ে যাতায়াত করার সুবিধা হয়েছে। পরিবহন ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে বিমানে অতি কম সময়ে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়া যায়। এই যাত্রা আরামদায়ক কিন্তু ব্যয়বহুল।ভারতবর্ষের সাধারণ জনগণ যাতায়াতের জন্য পথ পরিবহন ও রেল পরিবহনকে বেশি ব্যবহার করেন। উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা দেশের অর্থনৈতিক উন্নতিতে যথেষ্ট অবদান যোগায়।
Also Read-