বাক্য ও তাহার পরিবর্তন, বাচ্য পরিবর্তন, বাচ্য কতপ্রকার ও কি কি?
শিশুটি চাদ দেখিতেছে।
পুলিশ চোরটিকে ধরিয়া ফেলিয়াছে।
আমার দ্বারা কাজটি সিদ্ধ হইল।
শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রটি তিরস্কৃত হইয়াছিল।
আমার আসা হইবে না।
আমার এখনও স্থান হয় নাই।
শাঁখ বাজিতেছে।
বন্যার জলে দেশ ভাসিয়া গেল।
উপরি উক্ত বাক্যগুলি আলোচনা করিলে দেখা যায় যে সমাপিকা ক্রিয়ার রূপভেদের দ্বারা, কর্তা, কর্ম প্রভৃতির প্রাধান্য সূচিত হইতেছে।
তাহা হইলে বলা যায় যে ক্রিয়ার যে রূপভেদের দ্বারা কর্তা কর্ম প্রভৃতির প্রাধান্য নিণীত হইয়া থাকে তাহাকে বাচ্য বলে।
বাংলায় বাচ্য চারি প্রকার -(ক) কর্তৃবাচ্য, (খ) কর্মবাচ্য, (গ) ভাববাচ্য, (ঘ) কর্মকর্তৃবাচ্য।
(ক) কর্তৃবাচ্য ( Active Voice) :
শিশুটি চাদ দেখিতেছে।
সভাপতি তিনটি প্রস্তাব গ্রহণ করিলেন।
গুরুচরণ
লোকটা কিছুই মানিতনা।
এই বাক্যগুলিতে কর্তারই প্রাধান্য দেখা যাইতেছে এবং ক্রিয়া পদগুলি কর্তার অনুগামী হইয়াছে। যে বাচ্য ক্রিয়ার কার্য সম্পূর্ণভাবে কর্তৃনিষ্ঠ তাহাকে কর্তৃবাচ্য বলে।
কর্তৃবাচ্য কর্তার অনুসরণে ক্রিয়ার পুরুষ নির্ধারিত হয়। সংস্কৃত ব্যাকরণমতে কর্তৃবাচ্যের কর্তায় ১মা এবং কর্মে ২য়া বিভক্তি হয় এবং ক্রিয়াটি কর্মের অনুগামী হয়। বাংলা ব্যাকরণেও এই রীতি অনুসৃত হইতে দেখা যায়।
কর্তৃবাচ্য প্রয়োগেতু প্রথমা কর্তৃকারক।
দ্বিতীরান্তং তবেৎ কর্ম কত্রধীনম্ ক্রিয়াপদম্।।
(খ) কর্মবাচ্য (Passive Voice) :
আমার দ্বারা কাজটি সিদ্ধ হইল। এখানে ‘কাজটি’ কর্ম অথচ তাহাই কর্তার স্থান অধিকার করিয়া লইয়াছে। এমন কি ক্রিয়ার পুরুষও কর্ম রূপলাভ করিয়াছে। তাহা হইলে বলা যায় যে, যে বাচ্যে কর্মের প্রাধান্য থাকে অর্থাৎ কর্তা অপেক্ষা যেন কর্মের সঙ্গেই ক্রিয়ার ঘটনার প্রধান যোগ দেখা যায়। তাহাকে কর্মবাচ্য বলে।
বাংলায় কর্মবাচ্যের খুব সুনির্দিষ্ট রূপ পাওয়া যায়না, সংস্কৃত ব্যাকরণে সুস্পষ্ট নিয়ম আছে-
কর্মবাচ্য প্রয়োগেতু তৃতীয় কর্তৃকারকে।
প্রথমান্তং ভবেৎ কর্ম কর্মাধীনং ক্রিয়াপদং।।
অর্থাৎ কর্মবাচ্যের কর্তায় তৃতীয়া বিভক্তি, কর্মে প্রথমা বিভক্তি এবং ক্রিয়াটি কর্মপদের অধীন হয়। বাংলাতেও এই নিয়ম অনুসৃত হয়। কিন্তু সর্বত্র এই নিয়ম খাটে না।
আমার দ্বারা পু্স্তকটি পঠিত হইতেছে- ইহাই কর্মবাচ্যের রূপ হওয়া সঙ্গত, কিন্তু বাংলায় এই ধরণের প্রয়োগ অচল। সাধারণতঃ চলিত ভাষায় তৃতীয়া বিভক্তির চিহ্ন কদাচিৎ ব্যবহৃত হয়।
‘আমার বইটি পড়া হয়েছে’- এখানে কর্তায় তৃতীয়া বিভক্তি না হইয়া ষষ্ঠী বিভক্তি হইয়াছে।
চলিত ভাষায় কর্মবাচ্যে অনেক সময় কর্মটি উহ্য থাকে। কর্মবাচ্যে এইটিই সাধারণ
রীতি।
যেমন,
একটা চোর ধরা পড়েছে।
(গ) ভাববাচ্য (Verbal Voice) :
কি কাজ করা হয়?
তাহার আসা হইবেনা।
এই বাক্য দুইটিতে ক্রিয়ারই প্রাধান্য দেখা যাইতেছে। কর্তা বা কর্ম এখানে প্রধান নয়।
যে বাক্যে ক্রিয়ারই প্রাধান্য থাকে, বক্তার নিকটে ক্রিয়ার ঘটনাই হয় প্রধান কর্তাও কর্ম প্রধান হয়, সেখানে হয় ভাববাচ্য। ‘ভাব’ শব্দটির অর্থ হইল ক্রিয়া। ভাববাচ্যে ক্রিয়া সব সময়ই প্রথম পুরুষের এক বচন হয়। সংস্কৃত ব্যাকরণে পাই-
ভাবে কর্তুস্তৃতীয়া স্যাৎ কর্মভাবশ্চা সর্বদা।
প্রথম পুরুষস্যৈকবচনং স্যাৎ ক্রিয়াপদে ৷৷
বাংলাতেও এই রীতি অনুসরণ করা হয়। তবে কর্তায় ২য়া, ৩য়া বা ৭মী বিভক্তি দেখা
যায়।
যেমন, ‘আমার বইখানি এখনি পড়িতে হইবে’। (৭মী)
(ঘ) কর্মকর্তৃবাচ্য (Passive-Active Voice) :
শাখ বাজে।
বইগানি বেশ কাটে।
পা আর চলে না
এই উদাহরণগুলির মধ্যে কে কর্তা তাহা নির্ধারণ করা কঠিন হইয়া পড়িতেছে। যেন কর্মপদই কর্তৃপদের ন্যায় করিতেছে। তাহা হইলে বলা যায়,
যে বাচ্যে ক্রিয়ার কর্তাকে নির্ধারণ করা কঠিন এবং কর্মই যেন কর্তারূপে কাজ করে তাহাকে কর্মকর্তৃবাচ্য বলে ।
সংস্কৃত ব্যাকরণ মতে দেখা যায়-
ক্রিয়ামাণস্তু যৎ কর্ম স্বয়মেব প্রসিধ্যতি।
সুকবৈঃ স্বৈগুনৈঃ কর্তৃঃ কর্মকর্তেতি তদবিদুঃ।।
কর্তার নিজগুণে অনায়াসসাধ্যহেতু কর্মটি স্বয়ং সম্পন্ন (অর্থাৎ কর্মটি যেন নিজে নিজেই সম্পন্ন হইতেছে) বলিয়া উহা কর্তা হইয়া যায়, এইরূপ কর্মকে কর্মকর্তা বলে।
কর্তার নিজগুণে অনায়াসসাধ্যহেতু কর্মটি স্বয়ং সম্পন্ন (অর্থাৎ কর্মটি যেন নিজে
নিজেই সম্পন্ন হইতেছে) বলিয়া উহা কর্তা হইয়া যায়, এইরূপ কর্মকে কর্মকর্তা বলে।
এইরূপ কর্মে কর্তৃত্ব বুঝাইয়া যে বাচ্যের প্রয়োগ হয়, তাহাকে কর্মকর্তৃবাচ্য
বলে। বাংলাতেও প্রায় এই রীতি অনুসৃত হয়।
বাচ্য পরিবর্তন– একবাচ্য হইতে অন্যবাচ্যে পরিবর্তন করাকে বাচ্যান্তর বলে।
কর্তৃবাচ্যের বাক্যকে কর্ম ও ভাববাচ্যে এবং কর্ম বা ভাববাচ্যের বাক্যকে কর্তৃবাচ্যে পরিবর্তিত করা যায়।
বাক্য ও তাহার পরিবর্তন
কর্তৃবাচ্য | কর্মবাচ্য |
ও গান সে জানে । | ও গান তাহার জানা আছে। |
শিশুটি চাঁদ দেখিতেছে । | শিশু কর্তৃক চন্দ্র দৃষ্ট হইতেছে। |
বইখানি পড়া হোক | বইখানি পড়। |
চোর গৃহস্থ কর্তৃক প্রহৃত হইয়াছে। | গৃহস্থ চোরকে প্রহার করিয়াছে। |
কর্তৃবাচ্য | কর্মবাচ্য |
ক্লাসে গল্প করিওনা। | ক্লাসে গল্প করিতে নাই। |
আপনারা অবশ্যই আসিবেন। | আপনাদের অবশ্যই আসিতে হইবে। |
ভাববাচ্য | কর্তৃবাচ্য |
অবশেষে রণে ভঙ্গ দিতে হইল। | অবশেষে আমি রণে ভঙ্গ দিলাম। |
তাহার আসা হইবে না। | সে আসিবে না। |
অনুশীলনী (বাক্য ও তাহার পরিবর্তন)
১।
বাচ্য কাহাকে বলে? বাংলায় বাচ্য কতপ্রকার তাহা উদাহরণ দিয়া বুঝাইয়া
দাও।
উত্তরঃ ক্রিয়ার যে রূপভেদের দ্বারা কর্তা কর্ম প্রভৃতির প্রাধান্য
নিণীত হইয়া থাকে তাহাকে বাচ্য বলে।
বাংলায় বাচ্য চারি প্রকার -(ক) কর্তৃবাচ্য, (খ) কর্মবাচ্য, (গ) ভাববাচ্য, (ঘ) কর্মকর্তৃবাচ্য।
(ক) কর্তৃবাচ্য (Active Voice): যে বাচ্য ক্রিয়ার কার্য সম্পূর্ণভাবে কর্তৃনিষ্ঠ তাহাকে কর্তৃবাচ্য বলে। যেমন-
শিশুটি চাদ দেখিতেছে।
সভাপতি তিনটি প্রস্তাব গ্রহণ করিলেন।
গুরুচরণ
লোকটা কিছুই মানিতনা।
(খ) কর্মবাচ্য (Passive Voice) : যে বাচ্যে কর্মের প্রাধান্য থাকে অর্থাৎ কর্তা অপেক্ষা যেন কর্মের সঙ্গেই ক্রিয়ার ঘটনার প্রধান যোগ দেখা যায়। তাহাকে কর্মবাচ্য বলে। যেমন- একটা চোর ধরা পড়েছে ৷
(গ) ভাববাচ্য (Verbal Voice) : যে বাক্যে ক্রিয়ারই প্রাধান্য থাকে, বক্তার নিকটে ক্রিয়ার ঘটনাই হয় প্রধান কর্তাও কর্ম প্রধান হয়, সেখানে হয় ভাববাচ্য। যেমন- আমার বইখানি এখনি পড়িতে হইবে৷
(ঘ) কর্মকর্তৃবাচ্য (Passive-Active Voice) : যে বাচ্যে ক্রিয়ার কর্তাকে নির্ধারণ করা কঠিন এবং কর্মই যেন কর্তারূপে কাজ করে তাহাকে কর্মকর্তৃবাচ্য বলে । যেমন – শাঁখ বাজে, বইখানি বেশ কাটে, পা আর চলেনা৷
২। কর্মকর্তৃবাচ্য কাহাকে বলে?
উত্তরঃ- যে বাচ্যে ক্রিয়ার কর্তাকে নির্ধারণ
করা কঠিন এবং কর্মই যেন কর্তারূপে কাজ করে তাহাকে কর্মকর্তৃবাচ্য বলে । যেমন –
শাঁখ বাজে, বইখানি বেশ কাটে, পা আর চলেনা৷
৩। কর্মকর্তা কাহাকে বলে?
উত্তরঃ- কর্তার নিজগুণে অনায়াসসাধ্যহেতু
কর্মটি স্বয়ং সম্পন্ন (অর্থাৎ কর্মটি যেন নিজে নিজেই সম্পন্ন হইতেছে) বলিয়া উহা
কর্তা হইয়া যায়, এইরূপ কর্মকে কর্মকর্তা বলে।
৪। বাচ্যান্তর কাহাকে বলে?
উত্তরঃ- বাচ্য পরিবর্তন- একবাচ্য হইতে অন্যবাচ্যে
পরিবর্তন করাকে বাচ্যান্তর বলে।
৫। কর্মকর্তৃবাচ্য কাহাকে বলে?
উত্তরঃ- কর্তার নিজগুণে অনায়াসসাধ্যহেতু
কর্মটি স্বয়ং সম্পন্ন (অর্থাৎ কর্মটি যেন নিজে নিজেই সম্পন্ন হইতেছে) বলিয়া উহা
কর্তা হইয়া যায়, এইরূপ কর্মকে কর্মকর্তা বলে।
read more