নানার্থক শব্দ || নানার্থক শব্দের উদাহরণ

ডেইলি বরাক
By -

এমন কতকগুলি শব্দ আছে যাহারা ভিন্ন ভিন্ন স্থলে বিভিন্ন অর্থপ্রকাশ করিয়া থাকে। এই জাতীয় শব্দের বিভিন্ন অর্থ সম্বন্ধে সুস্পষ্ট জ্ঞান না থাকিলে বাক্যমধ্যে শব্দ গুলির যথার্থ প্রয়োগ করিতে অসুবিধার সম্মুখীন হইতে হয়। তাই এইজাতীয় (নানার্থক শব্দ ) ৩০ টি শব্দের অর্থ নিম্নে দেখানো হইল।



নানার্থক শব্দ

অঙ্ক –

(ক) গণিত – রাম অঙ্কে খুবই কীচা।
(খ) নাটকের ভাগ – ‘বিসর্জন’ নাটক পাঁচ অঙ্কে বিভক্ত।
(গ) ক্রোড় – মাতৃ অঙ্কে শিশু স্বভাবতই সুন্দর।
(ঘ) চিহ্ন – অঙ্কে লিখ, এক হাজার সাতাশী।

অর্থ –

(ক) মানে – তোমার কথার অর্থ বুঝিলাম না।
(খ) টাকাকড়ি -অর্থই অনর্থের মূলে।
(গ) প্রয়োজন – তেলা মাথায় তেল দেওয়ার কোনো অর্থনাই।
(ঘ) সত্য – সে যথার্থ কথাই বলিয়াছে।

উত্তর –

(ক) ব্যক্তিনাম – বিরাট রাজার পুত্র উত্তর বিশেষ রণনিপুণ ছিলেন না।
(খ) অসামান্য -বিবেকানন্দের ‘লোকোত্তর’ চরিত্রের প্রভাবে অনেক যুবকই অনুপ্রাণিত হইয়াছে।
(গ) ভবিষ্যত – ছেলেটি উত্তর জীবনে শাশস্ত্র চালনায় নিপুণ হইবে।
(ঘ) জবাব – এই কঠিন প্রশ্নের উত্তর কয়জনে দিতে পারিবে?
(ঙ) দিক – ভারতের উত্তরে নানাধিরাজ হিমালয়।
(চ) পরবর্তী – রবীন্দ্রোত্তর বাংলা কাব্যের গতি-প্রকৃতি নির্দেশ কর।

কর –

(ক) কিরণ – আজি এ প্রভাতে রবির কর,
কেমনে পশিল প্রাণের পর।
(খ) হাত – জননীর নেহের করস্পর্শে রুগ্ন সন্তানের অন্তর ভরিয়া যায়।
(গ) শুষ্ক – কর ফাঁকি দেওয়া অন্যায়।
(ঘ) হাতীর শুঁড় – হাতী কর দ্বারা জল পান করে।

কথা –

(ক) প্রতিশ্রুতি – কথা যখন দিয়াছি, তখন এই কাজ করিবই।
(খ) অনুরোধ – আশা করি আমার কথা রাখবে।
(গ) গল্প – কথা সাহিত্যের প্রথম সার্থক রচয়িতা বন্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
(ঘ) চিন্তা – মনের কথা একবার খুলেই বল।
(৬) প্রবার – কথায় বলে গেয়ো যোগী ভিখ পায় না।
(চ) প্রসঙ্গ – বিবাহের কথা উঠিতেই গৌরী অধোমুখ হইল।
(ছ) আলোচনা – পরের কথায় নাক গলানো উচিত নয়।

কর্ম –

(ক) কার্য – পৃথিবীর কর্মযজ্ঞে সকলকেই অংশ লইতে হইবে।
(খ) পেশা – ব্রাহ্মণেরা সাধারণত কুলকর্ম করিয়াই জীবিকা নির্বাহ করিতেন।
(গ) প্রাক্তন – কর্ম ফল ভোগ করিতেই হইবে।
(ঘ) অনুষ্ঠান – বিধর্মী হওয়া সত্ত্বেও মধুসূদন হিন্দুদের ক্রিয়াকর্মে শ্রদ্ধাশীল ছিলেন- প্রমাণ
তাঁহার সনেট।

কাণ্ড –

(ক) স্থূলজ্ঞান – তোমার একেবারেই কাণ্ডজ্ঞান নেই।
(খ) অধ্যায় – সপ্তকাণ্ড রামায়ণ দেবের সৃজিত।
(গ) গাছের গুড়ি – অশ্বখ কাণ্ডকে দেবজ্ঞানে পূজা করা রীতি আজও প্রচলিত আছে।
(ঘ) বিষম ব্যাপার – এ কি এ প্রকাণ্ড কাণ্ড সম্মুখে আমার।

খানা –

(ক) ভোজ – ক্যাম্পফায়ারের দিন বড়াখানা হইবে।
(খ) সংখ্যা – দড়িতে দশখানা কাপড় ঝুলিতেছে।
(গ) ডোবা – খানায় পড়িয়া লোকটি পা ভাঙ্গিয়াছে।
(ঘ) স্থান – নবাব তোষাখানার দ্বার খুলিতে হুকুম দিলেন।

গজ –

(ক) হাতী – ‘গতি জিনি গজরাজ’।
(খ) দাবাখেলার বল বিশেষ -গজের চালে কিস্তি মাৎ।
(গ) মাপ-বিশেষ – তিন গজ কাপড়ে তোমার পাঞ্জাবী হইবে।

গুণ –

(ক) দড়ি – শ্রীকান্ত নৌকার গুণ টানিয়া
চলিল।
(খ) বার – আমার বাড়ী তাহার বাড়ী হইতে তিন গুণ বড়।
(গ) উপকার – বড়লোকের ছেলেরা অনেক সময় শিক্ষার শুণ বুঝিতে পারে না।
(ঘ) যাদু, তুক – ডাইনী বুড়ী গুণ করিয়া ছেলেটিকে কঙ্কালসার করিয়া তুলিয়াছে।
(ঙ) ফলোৎপাদিকা শক্তি – ঔষধটির এমনি গুণ যে তাহা খাইবামাত্র জ্বর ছাড়িয়া গেল।
(চ) ধর্ম – প্রাচীনরা দ্রব্যগুণ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন।
(ছ) অলঙ্কার শাস্ত্রের – গুণ বিশেষ

“না রবে প্রসাদণ্ডণ, না হবে রসাল।
অতএব কহি ভাষা যাবনী মিশাল ।”

ঘন –

(ক) মেঘ -শাওণ গগনে ঘোর ঘনঘটা।
(খ) দৈর্ঘ্য প্রস্থ ও বেধ – এই বেদিটির ঘনফল কত হইবে?
(গ) অল্প সময়ের ব্যবধান – ঘন ঘন কারও বাড়ীতে যাওয়া ঠিকনহে।
(ঘ) নিবিড় – ঘন অরণ্যের মধ্যে সে পথ খুঁজিয়া পাইতেছে না।
(ঙ) গাঢ় – দুধটুকু ঘন করিয়া জ্বাল দাও।

চাল –

(ক) চাউল -ঢেঁকি-ছাঁটা চাল স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল।
(খ) ফন্দি – তাহার এই কূটনৈতিক চাল ব্যর্থ হইল।
(গ) প্রতিমার পিছনের পট – প্রতিমার চালচিত্রটি সুন্দর হইয়াছে।
(ঘ) জীবন যাত্রার রীতি – গদাই লস্করী চালে চলিওনা।

ছল –

(ক) প্রতারণা – ছলে-বলে কৌশলে তাহাকে বশ করিতে হইবে।
(খ) ব্যপদেশ – বল মারার ছলে যতীন রমেনকে আঘাত করিল।
(গ) কপট – আমার সঙ্গে মিথ্যা চল করিয়া লাভ কি?
(ঘ) উপলক্ষ্য – স্তুতির ছলে নিন্দা করিতে সে ওস্তাদ ।

ছাপা –

(ক) লুকানো – দুষ্কৃতি কখনও ছাপা থাকেনা।
(খ) মুদ্রণ – বইখানির ছাপা ও বাঁধাই বেশ ভাল।
(গ) অতিক্রম করা – বর্ষার জল পুকুর ছাপাইয়া উঠিয়াছে।

ছোট –

(ক) কনিষ্ঠ – সুরেশ সুকেশের ছোট ভাই।
(খ) পদে নীচু – অফিসের লোক ছোট সাহেবের জ্বালায় অস্তির।
(গ) খাটো – তোমার পাঞ্জাবীর ঝুল ২ ইঞ্চি ছোট হইয়াছে।
(ঘ) সমাজে অবনত – গান্ধীজী ছোট লোকদিককে হরিজন বলিতেন।
(৬) সংক্ষিপ্ত – সভাপতির ছোট বক্তৃতাটি বেশ সময়োপযোগী হইয়াছে।

ডাক –

(ক) খ্যাতি – সুমিত্রা এ অঞ্চলের ডাকের সুন্দরী।
(খ) নিলামের দর – রেডিঅগ্রামের ডাক উঠিল দেড় হাজার টাকা।
(গ) সম্বোধন – তাহার ডাক নাম নীলু।
(ঘ) চিৎকার – শিশুটি ডাক ছাড়িয়া কাদিতেছে।
(৬) চিঠি বিলি ব্যবস্থা – ডাক বাক্সে চিঠিখানা ফেলিয়া দাও।
(চ) পিশাচসিদ্ধ পুরুষ – ডাক ভবিষ্যতের কথা বলিতে পারে।

তাল –

(ক) সঙ্গীতের সময় বিভাগ – ‘নৃত্যের তালে তালে, হে নটরাজ।’
(খ) গোল পিণ্ড – ছোট ছেলেরা মাটির তাল পাকাইতেছে।
(গ) ফলবিশেষ – আজ মা তালের বড়া বানাইয়াছেন।
(ঘ) শরীরে চপেটা – পালোয়ানরা আখড়ায় তাল ঠুকিতেছে।
(ঙ) পিশাচ বিশেষ – তাল বেতাল সিদ্ধ তান্ত্রিকের সামনে খাইও না।

দণ্ড –

(ক) খেসারৎ – পচা মাছ কিনিয়া ছয়টাকা দণ্ড দিয়াছি।
(খ) শাস্তি – অপরাধ করিলে দণ্ড পাইতে হইবে।
(গ) ডাঙা – সে যষ্টি লাঠি যতিনের মাথা ফাটাইল।
(ঘ) সময়ের বিভাগ – দুই দণ্ড বেলা থাকিতে তাহারা আসিল।

দ্বিজ –

(ক) দ্বিতীয় জন্ম হয় যাহার – দ্বিজ বংশীদাসের কাব্য উৎকৃষ্ট।
(খ) পক্ষী – সে অনেক দ্বিজ বধ করিয়াছে।
(গ) দন্ত – ‘কুন্দ-কোরক জিনিয়া দ্বিজ ।’
(ঘ) দুইটি – ‘দ্রোণ দ্বিজ ধরুর্বেদ পাঠাইলা ক্রমে।’

নাম –

(ক) ইষ্টদেবের নাম – নাম-জপ করাই কলিযুগের ধর্ম।
(খ) ইষৎ – নামমাত্র লাভ করিয়া সে জিনিস বিক্রী করে।
(গ) খ্যাতি – মদখোর ও জুয়াড়ী পুত্র পিতার নাম ডুবাইল।
(ঘ) আখ্য – আমি পুত্রের নাম রাখিয়াছি অভিজিৎ।

পক্ষ –

(ক) দল -দু পক্ষের খেলোয়াড়ারা মাঠে নামিয়াছে।
(খ) চন্দ্রের ক্ষয় বা বৃদ্ধি কাল – শুক্লপক্ষের চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙ্গেছে।
(গ) একাধিক পত্নীর একটি – রামবাবুর দ্বিতীয় পক্ষের স্বীর ভয়ে সর্বদাই অস্থির৷
(থ) পাখির ডানা – রাবণ জটায়ুর পক্ষদেশ কর্তন করিলেন।
(ঙ) তরফ – আসামী পক্ষের উকীল সাক্ষীকে জেরা করিতেছেন।

ফল –

(ক) বৃক্ষ-লতাদির শস্য – গাছে ফল পাকিয়াছে।
(খ) পরিণাম – অন্যায়ের ফল ভোগ করিতে হইবেই।
(গ) নির্ধারণ – জ্যোতিষীর গণনার ফল আমার পক্ষে মোটেই সুবিধার নহে।
(ঘ) উপকার – হরেন ডাক্তারের ওষুধে ফল হইয়াছে।
(ঙ) অঙ্ক করিবার পর – চার নম্বর অঙ্কের ফল কত হইল? যে রাশি থাকে

বর –

(ক) আশীর্বাদ – কঠোর তপস্যার শেষে রাবণ ব্রহ্মার বর লাভ করিলেন।
(খ) বিবাহের পাত্র – বর আসিবার সময় হইয়াছে।
(গ) শ্রেষ্ঠ – শুন বরনারী।

বাস –

(ক) অবস্থান – আমি পিতামহের আমল হইতে আসামে বাস করিতেছি।
(খ) কাপড় – তিনি গৈরিক বাস ধারণ করিয়াছেন।
(গ) সুগন্ধ – ফুলের সুবাসে সমস্ত উদ্যান আমোদিত।

বিধি –

(ক) নিয়তি – বিধির বিধান খণ্ডাইবে কে?
(খ) বিধান – শাস্ত্রবিধি অনুসারে পূজা সমাপ্ত হইল।
(গ) আইন – ভারতীয় দণ্ডবিধির দশম ধারা অনুসারে মকর্দনা চলিতেছে।

রস –

(ক) অলঙ্কার শাস্ত্রের – রামায়ণ করুণ রসাত্মক মহাকাব্য নবরসের একটি
(খ) রঙ্গ – অমৃতলালের রস-রচনা অতি উৎকৃষ্ট।
(গ) নিঃস্রাব – ফোড়ার রস পড়িতেছে।
(ঘ) নির্যাস – লেবুর রসের সরবং স্বাস্থ্যর পক্ষে উপকারী।
(৬) রসায়ন – ‘রস’ শালায় প্রফুল্লচন্দ্র অধিকাংশ সময় কাটাইতেন।

রাগ –

(ক) ক্রোধ – তাহার রাগ পড়িয়াছে।
খে) শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের – তিনি মালকোষ রাগে খেয়াল গাহিলেন।
স্বরবিন্যাসের পদ্ধতি

(গ) রক্তিম – অস্তরবির রশ্মি আভায় খোলা জানালার ধারে।
(ঘ) প্রেম – পূর্বরাগের পদগুলি অপূর্ব।

লোক –

(ক) মনুষ্য – তিনি খুব আমুদে লোক।
(খ) জনসাধারণ – যাত্রা লোকশিক্ষার অন্যতম বাহন।
(গ) ভূবন – তিনি ইহলোক ত্যাগ করিলেন।
(ঘ) কর্মচারী – দোকানে একজন লোক রাখ, নাহলে ভীড়ের চাপ সামলাইতে পারবে না।

সূত্র –

(ক) সূতা – কার্পাস সূত্র নির্মিত বস্তুটি পরিধান কর।
(খ) ব্যপদেক বাতিক – কার্যসূত্রে পূজার বন্ধেও গৌহাটীতে থাকিতে হইল।
(গ) বা প্রয়োজনে সংক্ষিপ্ত – বেদান্ত সূত্রের এই ব্যাখ্যাটি অধ্যয়ন কর।
(ঘ) নাটকের প্রস্তাব – সংস্কৃত নাটকের সূত্রধারই নাটকের গোড়া পত্তন করিতেন।

হার –

(ক) মালা – এ মণিহার আমায় নাহি সাজে।
(খ) পরাজয় – প্রচণ্ড যুদ্ধের পর পুরু আলেকজেণ্ডারের নিকট হার স্বীকার করিলেন।
(গ) দর – জোড়া পিছু গামছার হার কত?

নানার্থক শব্দ, নানার্থক শব্দ কি, নানার্থক শব্দ কাহাকে বলে, নানার্থক শব্দের উদাহরণ,
Nanarthok sabdo,

Also read প্রায় সমোচ্চারিত শব্দ-যুগল

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn more
Ok, Go it!