নেপাল আর গোপাল, বাংলা ছোট গল্প, Bengali Short Story
নেপাল আর গোপাল দুই ভাই। নেপাল বড়ো আর গোপাল ছোটো। একদিন নেপাল ভাইকে বলল, ‘গোপাল, চলো আমাদের পূর্বপুরুষের যত সম্পত্তি আছে তা দু- জনে ভাগ করে নিই’ গোপাল দাদার কথায় সম্মতি জানাল।
নেপাল বলল, ”প্রথমে ছেঁড়া কাঁথাটা ভাগ করি, এসো। শীতকালে রাতে আমি ওটা গায়ে দেব, আর তুমি দিনের বেলা ব্যবহার করবে।” গোপাল রাজি হল।
দিনের বেলায় সে কাঁথা রোদে শুকিয়ে রাখে আর শীতের রাতে দাদা গায়ে দিয়ে আরামে ঘুমায়। এদিকে গোপাল প্রচণ্ড শীতের রাতে অন্ধকার কোণে বসে কাঁপতে থাকে।
দিনকয়েক পরে নেপাল বলল, “ভাই গোপাল, আমাদের বাগানের সব ফলন্ত গাছের গোড়ার দিকটা তোমাকে দিলাম, আর আগাগুলো আমি নিচ্ছি, কেমন?”
এবারও গোপাল বলল, “আচ্ছা তাই হবে।” গোপাল গাছের গোড়ায় জল, সার দেয় আর নেপাল মহানন্দে তার ফল খায়।
আরেকদিন শ্যামলী গাইটার ব্যাপারে গোপালকে ডেকে নেপাল বলল, “এসো ভাই, এবারে গাইয়ের সামনের দিকটা তুমি নাও। আমি নিচ্ছি পিছনটা।” গোপাল তাতেও রাজি হয়ে গেল।
ছোটোভাই শ্যামলীকে যত্ন করে খাওয়ায় আর বড়োভাই মজা করে তার দুধ খায়। এসব দেখে গোপালের মাথায় যেন বজ্রপাত হল।
তাদের পাশের বাড়িতে থাকতেন এক বুড়িমা । তিনি গোপালের দুঃখ দেখে চুপিচুপি তাকে ডেকে বললেন,
“বাবা, তুমি এত কষ্ট করছ কেন?” গোপাল বলল, “কী করব, দাদা যে আমার চেয়ে বড়ো।”
বুড়িমা তখন তাকে একটা বুদ্ধি দিলেন- “বাবা একটা কাজ করো, ছেঁড়া কাঁথাটা দিনের বেলায় ভিজিয়ে রাখবে। এতে নেপাল শোবার সময় রাগ করতে পারে। তুমি বলবে – ‘দিনে তো কাঁথাটা আমার, আমি এটা নিয়ে যা খুশি করতে পারি’।
পাকা ফল পাড়তে নেপাল গাছে উঠলে কুড়ুল দিয়ে তুমি গাছের গোড়া কাটার ভান করবে। দুধ দোয়ানোর সময় শ্যামলীর কানে সুড়সুড়ি দিতে থাকবে যাতে নেপাল আর দুধ দোয়াতে না পারে। এতে নিশ্চয় তোমার ভালো হবে।”
বুড়িমার কথামতোই কাজ করল গোপাল।নেপাল দারুণ জব্দ হল আর লজ্জাও পেল খুব। সেদিন থেকে সে চালাকি ছেড়ে ভাইকে সব কিছু সমানভাবে ভাগ করে দিত। এরপর দুই ভাই মিলেমিশে সুখে দিন কাটাতে লাগল।
(লক্ষ্মীনাথ বেজবরুয়ার একটি গল্প অবলম্বনে)
আরোও পড়ুন