পাখি আর মানুষ
পাখি আর মানুষ , বাংলা গল্প ও কাহিনী, Bengali Story
একদেশে সর্বধনু নামে এক রাজা ছিলেন। শিকার করা ছিল তার শখ। পাখির মাংস
না হলে তাঁর ভাতই হজম হত না। তির-ধনুক দিয়ে তিনি সব সময়ই শালিক, বক আরও
কত পাখি মেরে আহার করতেন। একদিন মধুকর নামে এক যুবক রাজাকে এ ধরনের
কাজে বাধা দিয়ে বললেন, মহারাজ, আহারের তৃপ্তির জন্য আপনার পাখি মারাটা ঠিক নয়। আপনি বোধহয় জানেন যে, পাখি মানুষের খুব উপকারী বন্ধু। চড়ুই, শালিকের মতো পাখিরা শস্যখেতের ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খেয়ে শস্য রক্ষা করে। আসলে পাখিরা কৃষকের পরম বন্ধু। তাই জনসাধারণের মঙ্গলের জন্য আপনি পাখি শিকার বন্ধ করুন ।
যুবকের কথা শুনে রাজা তো ক্রোধে অগ্নিশর্মা। এত বড়ো দুঃসাহস! তাকে উচিত- অনুচিত শেখায়! তবে তিনি যুবকটিকে মারলেন না, কোনো মতে রেহাই দিলেন। যুবকটির পরামর্শ তো তিনি কানেই নিলেন না, ফুৎকারে উড়িয়ে দিলেন, আর আগের মতোই পাখি শিকার করতে থাকলেন। রাজার নির্বিচার হত্যালীলা দেখে পাখিরাও এক সময় সে দেশ থেকে উড়ে চলে গেল অন্য দেশে সর্বধনুর রাজত্বে পাখি খুঁজে পাওয়াই হয়ে উঠল দুষ্কর ।
মনের দুঃখে মধুকরও একদিন চলে গেলেন দূরান্তরের দেশে। সেই দেশের রাজার একটি মেয়ে ছিল। এই যুবকটির সহজ সরল সৎ আচরণে মুগ্ধ হয়ে তিনি তাকে সিংহাসনে বসালেন আর নিজের একমাত্র সম্ভান মাধবীর সঙ্গে তার’ বিয়ে দিলেন।
এদিকে সর্বধনুর দেশে পাখির অভাবে পোকা-মাকড়ের সংখ্যা গেল খুব বেড়ে । তারা
শস্যখেতের সব শস্য খেয়ে ফেলল।গুটিপোকা, শুঁয়োপোকারাও গাছের সব লতা-পাতা খেয়ে শেষ করে দিল। সবুজ পাতার অভাবে একসময় গাছপালা, লতা-গুল্ম সব শুকিয়ে গেল। গাছের অভাবে বন্ধ হয়ে গেল বৃষ্টিও। দেশে দেখা দিল দুরভিক্ষ। খাদ্যাভাবে ধনী-গরিব সবারই ভিখারি হওয়ার দশা। খাবারের জন্য একসময় তারা দিগ্-বিদিকে ভিক্ষা করতে বেরিয়ে পড়তে বাধ্য হল।
রাজা সর্বধনুও ভিখারিতে পরিণত হলেন। একদিন ভিক্ষা করতে তিনি এসে উপস্থিত হলেন মধুকরের দেশে। তাকে দেখেই মধুকর চিনতে পারলেন। আদর-আপ্যায়ন করে তিনি তাকে রাজপ্রাসাদের অতিথির সম্মান দিলেন। পরদিন সর্বধনুর কাছে নিজের পরিচয় তুলে ধরে বললেন, “মহারাজ, আমি মধুকর। মনে আছে আপনাকে পাখি মারতে একদিন বাধা দিয়েছিলাম। তখন অহংকারে আপনি আমার কথা শোনেননি। এখন তার প্রতিফল ভোগ করছেন। ঠিক আছে, আমি আপনাকে আবার পাখি দেব। এবার আর কখনো আপনি পাখি মারবেন না। এই বলে মধুকর খাঁচায় ভরে এক ঝাঁক পাখি সর্বধনুকে উপহার দিলেন। আর বললেন, এই পাখিগুলো নিয়ে আপনার দেশে ফিরে যান। এদের নিজের সম্ভানের মতো লালন-পালন করবেন। সর্বধনু কৃতজ্ঞতায় নত হয়ে সেই উপহার নিয়ে নিজের দেশে এসে তাদের খোলা আকাশে ছেড়ে দিলেন।
আরোও পড়ুন