রঙের রহস্য | বাংলা ছোটো গল্প
রঙের রহস্য
গল্প রঙের রহস্য | বাংলা ছোটো গল্প
সোনার মেঘে আলতা ঢেলে সিঁদুর মেখে গায়
সকাল সাথে সূর্যি মামা নিত্য আসে যায়।
নিত্যি খেলে রঙের খেলা আকাশ ভ’রে ভ’রে
আপন ছবি আপনি মুছে আঁকে নতুন ক’রে।
ভোরের ছবি মিলিয়ে দিল দিনের আলো জ্বেলে
সাবের আঁকা রঙিন ছবি রাতের কালি ঢেলে!
আবার আঁকে আবার মোছে দিনের পরে দিন
আপন সাথে আপন খেলা চলে বিরামহীন।
ফুরায় না কি সোনার খেলা? রঙের নাহি পার?
কেউ কি জানে কাহার সাথে এমন খেলা তার?
সেই খেলা, যে ধরার বুকে আলোর গানে গানে
উঠ্ছে জেগে- সেই কথা কি সূর্যি মামা জানে?
সুকুমার রায়ের ‘আজব খেলা’ কবিতাটি তোমাদের কেমন লাগল? রং বা রঙিন জিনিস কার না ভালো লাগে? নীল আকাশ, সাত রঙা রামধনু, সবুজ পাহাড়, সোনালি ধানের খেত, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত সবারই মন মুগ্ধ করে।
আদিম মানুষেরও রঙের প্রতি আকর্ষণ ছিল। ওদের মধ্যে গুহায় বসবাসকারী মানুষও গুহার গায়ে রঙিন ছবি আঁকত।
আমরা সাধারণত কী কী রং দেখতে পাই? ভিন্ন ভিন্ন রং কেন বা হয়? বহুকাল ধরে মানুষ রঙের রহস্য ভেদ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সে প্রায় দেড়শ বছর আগেকার কথা, একদিন এক ইংরেজ বুড়ি জানলা দিয়ে দেখতে পেলেন যে, পাশের বাড়িতে বাগানে বসে একজন বয়স্ক লোক সারাদিন কেবল বুদবুদ ওড়াচ্ছে। দু’চারদিন এরকম দেখে বুড়ি ভাবলেন লোকটি নিশ্চয় পাগল- তা না হলে, কাজ নেই কর্ম নেই, কেবল কচি খোকার মতো বুদবুদ নিয়ে খেলা- এ আবার কোন দেশী আমোদ! বুড়ি তখন ব্যস্ত হয়ে থানায় গিয়ে খবর দিল।
যে লোকটি বুদবুদ ওড়াত, পুলিশ খবর নিয়ে দেখল, তিনি আর কেউ নন, স্বয়ং স্যার আইজাক নিউটন- যাঁর মতো অতবড়ো বিজ্ঞানী হাজার বছরে দুজন পাওয়া দুষ্কর । বুদবুদের গায়ে যে রামধনুর রং দেখা যায়, নিউটন তখন তার কারণ অনুসন্ধান করছিলেন। তিনি সর্বপ্রথম পরীক্ষা করে দেখিয়েছিলেন যে সূর্যের আলোয় সাতটি রং আছে। সেই সাতটি রং মিলেই সাদা রং হয়।
অন্য প্রাণীরাও কী আমাদের মতো বিভিন্ন রং দেখতে পায়? বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন যে, গরিলা, গিবন্, শিম্পাঞ্জী এবং ওরাংওটাং জাতীয় বন-মানুষরা আমাদের মতোই রং চিনতে পারে। কিছু পাখিও আমাদের মতো রং চিনতে পারে। বলা হয় যে, কুমির সব জিনিসকেই মাটির রং-এ দেখতে পায়। মৌ-মাছিরা অতি-বেগুনি (Ultra Violet) রংটি দেখতে পায়। কিন্তু ওরা লাল রং চিনতে পারে না।
রূপকথার যাদুকরের মতো আমরাও যদি কখনো কখনো মৌ-মাছি বা কুমিরের মতো হয়ে এই পৃথিবীকে দেখতে পারতাম, তবে কেমন মজার হত বলতো!
(সুকুমার রায়ের ‘পণ্ডিতের খেলা’ গল্পের অবলম্বনে) গল্প রঙের রহস্য
আরোও – বীরাঙ্গনা মুলাগাভরু