উৎসব (festival) বলতে সাধারণত আনন্দ উপভোগ করা, নতুন কাপড়চোপড় পরা, নানারকমারি খাবার প্রস্তুত করা, ঢাক-ঢোল নানা রকম বাজনা বাজানো, পটকা বাজি ফাটানো, নাচ, গান, ইত্যাদি অনেক কথাই আমাদের মনে আসে৷ উৎসবের মাধ্যমেই আমাদের মেলামেশা প্রেম-প্রতীর ভাব ও একতার ভাববৃদ্ধি পায়৷ সমাজে প্রচলিত সংস্কৃতি বজায় থাকে৷
(toc)
উৎসবগুলো আমরা বিভিন্নভাবে পালন করি। কিছু হচ্ছে ঘরোয়া উৎস আর কিছু হচ্ছে সর্বজনীন, আবার কয়েকটা রাষ্ট্রীয় উৎসব।
- ঘরোয়াভাবে পালিত উৎসবগুলো হচ্ছে জন্মদিন, বিয়ে, ব্রত, অন্নপ্রাশন, নবান্ন ইত্যাদি।
- সর্বজনীনভাবে পালিত উৎসবগুলো হচ্ছে বিহু, মে-ডাম-মেফি, ইদ, দুর্গাপূজা, আলি আই-লৃগাং, ফাতেহা-ই-দোয়াজ-দহম, মহরম ইত্যাদি৷
- কিছু উৎসব আবার সর্বজনীন ও ঘরোয়া দুই ভারই পালন করা হয়। যেমন -বিহু, বাথৌপুজা, ইদ, লক্ষ্মীপূজা, সরস্বতী পূজা, দুর্গাপূজা ইত্যাদি৷
- রাষ্ট্রীয় উৎসবগুলো সমগ্র দেশ জুড়ে পালন করা হয়, যেমন গণতন্ত্র দিবস, স্বাধীনতা দিবস ইত্যাদি৷
- রাষ্ট্রীয় দিবসে রাষ্ট্রীয় পতাকা উত্তোলন করে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়।
ভারতের জাতীয় সংগীত
জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে
ভারতভাগ্যবিধাতা!
পাঞ্জাব সিন্ধু গুজরাট
মারাঠা
দ্রাবিড় উতৎকল বঙ্গ
বিন্ধ্য হিমাচল যমুনা গঙ্গা
উচ্ছলজলধিতরঙ্গ,
তব
শুভ নামে জাগে,
তব শুভ আশিস মাগে,
গাহে তব জয়গাথা ৷
জলগণমঙ্গলদায়ক
জয় হে
ভারতভাগ্যবিধাতা!
জয় হে, জয় হে, জয় হে,
জয় জয় জয়,
জয় হে ।।
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
উৎসবগুলো পালন করার এক-একটা উদ্দেশ্য থাকে। কিছু কৃষিকাজের সাথে অর্থাৎ চাষ সম্পর্কিত কাজের সাথে জড়িত। অন্যান্য কয়েকটা ধর্মের সাথে জড়িত। আবার কিছু মহৎব্যক্তির মৃত্যুর তিথির সাথে জড়িত। আবার কিছু উৎসব পালন করার সময় সেই তারিখের সাথে জড়িত বিশেষ ঘটনার কথা মনে পড়ে যায়।
মহৎব্যক্তির জন্মের দিনটি জন্মোৎসব আর মৃত্যুর দিনটি মৃত্যুতিথি হিসার পালন করা হয়। উদাহরণ স্বরূপ- শংকরদেরের জন্মোৎসব, শংকরদেরের তিথি, মাধবদেবের তিথি, হরিদেরের তিথি, গুরু নানকের জন্মদিন, নেতাজির জন্মদিন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য দিবস।
দুর্গা পূজা, সরস্বতী পূজা, বড়দিন, ইদ, ফাতেহা-ই-দোয়াজ-দহম প্রভৃতি ধর্মের সঙ্গে জড়িত উৎসব।
বৈশাখ বিহু, বৈশাগু, মাঘ বিহু, কার্তিক বিহু, আলি-আই-লৃগাং, বাইখু, করম পূজা, টুসু, বাঁশ পূজা, ভঠেলি, সুয়েরি ইত্যাদি কৃষির সঙ্গে জড়িত উৎসব।
কোনো কোনো দিন বা দিবস আছে যেগুলোকে উৎসরনর দিবস হিসার পালন করা হয়। বিশ্ব পরিরশ দিবস হল এরকম একটি দিবস। প্রতিবৎসর ৫ জুন এই দিবস পালন করা হয়। সেই দিনটিতে শোভাযাত্রা বের হয়, সভা সমিতি নানারকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদির আয়োজন করা হয়। এই সব দিবস উদযাপনের মাধ্যমে আমরা প্রয়োজনীয় কিছু কথা পুনরায় আলোচনা করতে পারি যেগুলো আমাদের সব সময় মনে রেখে মেনে চলা দরকার । তা না হলে আমাদের অনেক ক্ষতিও হতে পারে।
পরিবেশ বলতে কী রাঝায়, পরিবেশকে কীভাবে রক্ষা করা যায়, তা মেনে না চললে মানব জীবনে কত ধরনের বিপদ হতে পারে সেই সকল কথা সভায় আলোচনা করা হয়।
এক একজন ব্যক্তি জনসাধারণের জন্য কিছু মহৎ কাজ করে যান। তাদের দিবসগুলো নির্দিষ্ট তারিখে পালিত হয়। যেমন ২ ডিসেম্বর চুকাফা দিবস, ২৪ নভেম্বর লাচিত দিবস, ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস, ১৪ নভেম্বর শিশু দিবস, ২৬ জানুয়ারি শিল্পী দিবস ইত্যাদি।
কোন্ উৎসব বা দিবস কোন্ ব্যক্তির সঙ্গে জড়িত জেনে নিই –
ব্যক্তির নাম | দিবস |
মহাবীর জৈন | মহাবীর জয়ন্তী |
বুদ্ধদেব | বুদ্ধ পূর্ণিমা |
যিশুখ্রিষ্ট | বড়দিন |
পয়গম্বর হজরত মহম্মদ | ফাতেহা-ই-দোয়াজ দহম |
গুরু নানক | গুরু নানক জয়ন্তী |
মহাত্মা গান্ধী | গান্ধী জয়ন্তী |
স্বামী বিবেকানন্দ | আন্তর্জাতিক যুব দিবস |
জওহরলাল নেহরু | শিশু দিবস |
ডঃ সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণন | শিক্ষক দিবস |
জ্যোতিপ্রসাদ আগরওয়ালা | শিল্পী দিবস |
বিষ্ণু প্রসাদ রাভা | রাভা দিবস |
জোনবিল মেলা উৎসব
কোনো কোনো উৎসব জায়গা বিশেষে পালন করা হয় যেমন – জোনবিল মেলা। মরিগাঁও জেলায় জাগিরোডের কাছে জোনবিল নামে একটি বিল আছে। ওই বিলের তীরে তিওয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা মাঘ মাসের সংক্রান্তির পরের শুক্রবার থেকে কয়েকদিন ধরে একটা মেলার আয়োজন এটাই জোনবিল মেলা চলিত নিয়ম অনুসারে গোভা রাজা জোনবিলে কর আদায় করতে আসে। এই উপলক্ষে উপজাতি লোকেদের সঙ্গে সমতলের বাসিন্দাদের সাথে বিভিন্ন জাতি-জনজাতির মানুষ এসে ও এই মেলার আয়োজন করে। এই মেলার বিশেষত্ব হল পুরনো দিনের বিনিময় প্রথার মতো এখানেও বিভিন্ন ধরনের জিনিষপত্র একে অন্যের সাথে বিনিময় করে। এভাবে জিনিষের বিনিময়ে জিনিষ দেওয়া-নেওয়াকে বিনিময় প্রথা বলে।
মশা খেদা উৎসব
দরং এবং নিম্ন অসমের একটি উৎসব হল “মশা খেদা” উৎসব। অগ্রহায়ণ মাসের পূর্ণিমারাতে হাতে লাঠি নিয়ে বালকেরা মশা খেদা গান গেয়ে গৃহস্থকে আশীর্বাদ করে। মশা তাড়ানোর সময় বালকেরা চত্রাকারে ঘুরে ঘুরে গান গায়।
ও হরি মশাগো চলো যাই, মশা খেদাই মশা কয়,
মল্লাম গো, ডেফলের ধোঁয়া দিব
গো।
ডেফলে নাই লবণ, চাউল তুলে মন মন
বাঁশের পাতা চিকিমিকি,
আমার
লাগে আধলিসিকি।
জয় রাম বলো, জয় হরিবলো
গৃহস্থের কল্যাণ কামনীয়।
আরোও পড়ুন – সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান Our Organization and Institutions