রঙের রহস্য পাঠের প্রশ্ন উত্তর | পাঠ-৮ পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা অসম Class 5 Bengali Assam.
(toc)
পাঠটি শুদ্ধ উচ্চারণে পড়ো।
সোনার মেঘে আলতা ঢেলে সিঁদুর মেখে গায়
সকাল সাথে সূর্যি মামা নিত্য আসে যায়।
নিত্যি খেলে রঙের খেলা আকাশ ভ’রে ভ’রে
আপন ছবি আপনি মুছে আঁকে নতুন ক’রে।
ভোরের ছবি মিলিয়ে দিল দিনের আলো জ্বেলে
সাবের আঁকা রঙিন ছবি রাতের কালি ঢেলে!
আবার আঁকে আবার মোছে দিনের পরে দিন
আপন সাথে আপন খেলা চলে বিরামহীন।
ফুরায় না কি সোনার খেলা? রঙের নাহি পার?
কেউ কি জানে কাহার সাথে এমন খেলা তার?
সেই খেলা, যে ধরার বুকে আলোর গানে গানে
উঠ্ছে জেগে- সেই কথা কি সূর্যি মামা জানে?
সুকুমার রায়ের ‘আজব খেলা’ কবিতাটি তোমাদের কেমন লাগল? রং বা রঙিন জিনিস কার না ভালো লাগে? নীল আকাশ, সাত রঙা রামধনু, সবুজ পাহাড়, সোনালি ধানের খেত, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত সবারই মন মুগ্ধ করে।
আদিম মানুষেরও রঙের প্রতি আকর্ষণ ছিল। ওদের মধ্যে গুহায় বসবাসকারী মানুষও গুহার গায়ে রঙিন ছবি আঁকত।
আমরা সাধারণত কী কী রং দেখতে পাই? ভিন্ন ভিন্ন রং কেন বা হয়? বহুকাল ধরে মানুষ রঙের রহস্য ভেদ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সে প্রায় দেড়শ বছর আগেকার কথা, একদিন এক ইংরেজ বুড়ি জানলা দিয়ে দেখতে পেলেন যে, পাশের বাড়িতে বাগানে বসে একজন বয়স্ক লোক সারাদিন কেবল বুদবুদ ওড়াচ্ছে। দু’চারদিন এরকম দেখে বুড়ি ভাবলেন লোকটি নিশ্চয় পাগল- তা না হলে, কাজ নেই কর্ম নেই, কেবল কচি খোকার মতো বুদবুদ নিয়ে খেলা- এ আবার কোন দেশী আমোদ! বুড়ি তখন ব্যস্ত হয়ে থানায় গিয়ে খবর দিল।
যে লোকটি বুদবুদ ওড়াত, পুলিশ খবর নিয়ে দেখল, তিনি আর কেউ নন, স্বয়ং স্যার আইজাক নিউটন- যাঁর মতো অতবড়ো বিজ্ঞানী হাজার বছরে দুজন পাওয়া দুষ্কর । বুদবুদের গায়ে যে রামধনুর রং দেখা যায়, নিউটন তখন তার কারণ অনুসন্ধান করছিলেন। তিনি সর্বপ্রথম পরীক্ষা করে দেখিয়েছিলেন যে সূর্যের আলোয় সাতটি রং আছে। সেই সাতটি রং মিলেই সাদা রং হয়।
অন্য প্রাণীরাও কী আমাদের মতো বিভিন্ন রং দেখতে পায়? বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন যে, গরিলা, গিবন্, শিম্পাঞ্জী এবং ওরাংওটাং জাতীয় বন-মানুষরা আমাদের মতোই রং চিনতে পারে। কিছু পাখিও আমাদের মতো রং চিনতে পারে। বলা হয় যে, কুমির সব জিনিসকেই মাটির রং-এ দেখতে পায়। মৌ-মাছিরা অতি-বেগুনি (Ultra Violet) রংটি দেখতে পায়। কিন্তু ওরা লাল রং চিনতে পারে না।
রূপকথার যাদুকরের মতো আমরাও যদি কখনো কখনো মৌ-মাছি বা কুমিরের মতো হয়ে এই পৃথিবীকে দেখতে পারতাম, তবে কেমন মজার হত বলতো!
(সুকুমার রায়ের ‘পণ্ডিতের খেলা’ গল্পের অবলম্বনে)
উত্তর দাও।
(ক) রঙের রহস্য কে আবিষ্কার করেছেন?
উত্তরঃ- স্যার আইজাক নিউটন রহস্য কে
আবিষ্কার করেছেন।
(খ) সূর্যের আলোয় কয়টি রং থাকে?
উত্তরঃ- সূর্যের আলোয় সাতটি রং থাকে।
(গ) সাদা রং কীভাবে সৃষ্টি হয়?
উত্তরঃ- সূর্যের আলোয় সাতটি রং মিলে সাদা
রঙ সৃষ্টি হয়৷
(ঘ) আদিম মানুষেরা গুহার গায়ে কী আঁকত?
উত্তরঃ- আদিম মানুষেরা গুহার গায়ে
বিভিন্ন ধরনের রঙিন ছবি আঁকত।
(ঙ) কোন কোন প্রাণী আমাদের মতো রং চেনে?
উত্তরঃ- গরিলা, গিবন্, শিম্পাঞ্জী
এবং ওরাংওটাং জাতীয় বন-মানুষরা আমাদের মতোই রং চিনতে পারে।
কার কী রং দাগ টেনে মেলাও।
উত্তরঃ-
শূন্যস্থান পূর্ণ করো।
(ক) স্যার __________ মতো অতবড়ো বিজ্ঞানী হাজার বছরে দুজন পাওয়া দুষ্কর।
উত্তরঃ-
আইজাক নিউটনের
(খ) __________ সব জিনিসকেই মাটির রং-এ দেখতে পায়।
উত্তরঃ- কুমির
(গ) মৌ-মাছিরা __________ রংটি দেখতে পায়।
উত্তরঃ- অতিবেগুনী (Ultra
Violet)
খ -ভাষা অধ্যয়ন (ব্যবহারিক ব্যাকরণ)
মুগ্ধ, দুষ্কর, অস্ত, অনুসন্ধান, শিম্পঞ্জী
বিজ্ঞানী, নিশ্চয়, স্বয়ং,
বয়স্ক, ওড়াচ্ছে
গ্ধ = গ +ধ
ষ্ক = ষ + ক
স্ত = স + ত
ন্ধ = ন + ধ
ঞ্জ = ঞ +
জ
জ্ঞ = জ + ঞ
শ্চ = শ + চ
স্ব = স + ব
স্ক = স + ক
চ্ছ
= চ + ছ
বাক্য রচনা করো।
আমোদ, বুদবুদ, দুষ্কর, রামধনু, আকর্ষণ
আমোদ = বুদবুদ ওড়ানো এটি একটি আমোদ ।
বুদবুদ = বুদবুদের গায়ে রামধনু রং দেখা যায়৷
দুষ্কর = স্যার আইজাক নিউটনের মতো অতবড়ো বিজ্ঞানী হাজার বছরে দুজন পাওয়া দুষ্কর।
রামধনু = আকশে রামধনু দেখা যায়।
আকর্ষণ = আদিম মানুষদের রঙের প্রতি আকর্ষণ ছিল।
নীচের বিশেষণ পদে উপযুক্ত বিশেষ্য পদ বসাও। যেমন- নীল আকাশ।
(ক) রক্ত লাল
(খ) সবুজ পাতা
(গ) হলুদ সর্ষে ফুল
এসো, জানি।
অনুস্বার (ং) ঙ ধ্বনির একটি রূপ। অনুস্বার যুক্ত হলে ঙ ধ্বনির উচ্চারণ ব্যঞ্জনান্ত হয়। অপরদিকে অনুস্বারযুক্ত শব্দে বিভক্তি বা প্রত্যয় যোগ হলে অনুস্বার ধ্বনিটি ঙ-তে পরিবর্তিত হয়। যেমন- রং > রঙের।
গ – জ্ঞান-সম্প্রসারণ
এসো, রঙের রহস্য বিষয়ে আরও কিছু কথা জানি।
আমরা নানান ধরনের রং দেখি কিন্তু ভিন্ন রং দেখার কারণ কী ? কারণ হল, কোনো জিনিস থেকে আলো প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখের পর্দায় পড়লে আমরা জিনিসটি দেখি। অন্ধকারে আলোর অভাবে এজন্যই আমরা কোনও জিনিস দেখতে পাই না।
ধরা যাক, চোখের সামনে কোনও নীল জিনিস দেখছি; এর কারণ হল আলোর সব রং-গুলো জিনিসটির
ওপর পড়ার পর বাকি রংগুলো শোষণ করে শুধুমাত্র নীল রংটিই আমাদের চোখে প্রেরণ
করেছে। ভোরের সূর্যকে আমরা লাল দেখি, কারণ সূর্যের বাকি রং গুলো বায়ুমণ্ডল শোষণ
করে নেয়। এভাবে কালি, ব্ল্যাকবোর্ড, স্লেটকে আমরা কালো দেখি কারণ এগুলোর ওপর
প্রতিফলিত আলোর
কোনও রং-ই আমাদের চোখে এসে পড়ে না।
এসো, রঙের রহস্য ভেদকারী বিজ্ঞানীর বিষয়ে কিছু কথা জানি।
রঙের রহস্য ভেদকারী বিজ্ঞানীর নাম স্যার আইজাক নিউটন । ১৬৪২ সালে ইংলন্ডে তার জন্ম হয়েছিল। নিউটন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেছিলেন এবং পরে সেখানেই অধ্যাপনা করেন। গণিত, পদার্থ বিজ্ঞান এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানে তার অবদান অবিস্মরণীয় পদার্থের গতি সম্পর্কীয় তিনটি বিখ্যাত সূত্র তিনি আবিষ্কার করেন। এই সূত্রসমূহ নিউটনের সুত্র নামে বিখ্যাত। গাছ থেকে আপেল পড়া দেখে নিউটনের আবিষ্কৃত মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্বের কাহিনি সর্বজন বিদিত। তার অন্যান্য আবিষ্কারের ভেতর আলোর প্রতিফলন এবং দূরবীক্ষণ যন্ত্র উল্লেখযোগ্য। ১৭২৭ সালের ২০ মার্চে সত্যাম্বেষী এই মহান বিজ্ঞানীর দেহাবসান ঘটে।
আলোর সাতটি রঙকে সংক্ষেপে ভিবজিওর (VIBGYOR) বলা হয়। এই শব্দটির সঙ্গে পরিচিত হই –
V = VIOLET (বেগুনি)
I = INDIGO (ঘন নীল)
B = BLUE (নীল)
G = GREEN (সবুজ)
Y = YELLOW (হলুদ)
O = ORANGE (কমলা)
R = RED (লাল)
এসো, কবি দীনবন্ধু মিত্রের ‘রাত পোহাল’ কবিতাটিও অংশ সবাই মিলে আবৃত্তি করি।
রাত পোহাল
রাত পোহাল ফরসা হল
ফুটল কত ফুল,
কাঁপিয়ে পাখা নীল পতাকা
জুটল অলিকুল?
পূরবভাগে নবীন রাগে
উঠল দিবাকর।
সোনার বরন তরুণ তপন
দেখতে মনোহর।
(সংক্ষেপিত)
কবি- দীনবন্ধু মিত্র
একটি রামধনুর ছবি এঁকে নীচের রংগুলো ক্রম অনুযায়ী ব্যবহার করো।
R = লাল
O = কমলা
Y = হলুদ
G = সবুজ
B = নীল
I =
ঘননীল
V = বেগুনি
এখন নীচের রংগুলো মেশালে কী নতুন রঙের সৃষ্টি হয় সেটা দেখে লেখো।
(ক) লালা + নীল = বেগুনী ।
(খ) লাল + হলুদ = কমলা ।
(গ) হলুদ + নীল =
সবুজ ।
(ঘ) লাল + নীল + হলুদ =
রঙ সংমিশ্রণ –
লাল + হলুদ = কমলা ।
হলুদ + নীল = সবুজ ।
নীল + লাল = বেগুনী ।
বেগুনী
+ সবুজ + লাল = কালো ।
লাল + কালো = খয়েরী ।
খয়েরী + হলুদ = মেঠো
হলুদ ।
হলুদ + সবুজ = হালকা সবুজ ।
সবুজ + নীল = গাঢ় সবুজ ।
সাদা
+ লাল = গোলাপী ।
সাদা + হলুদ = হালকা হলুদ ।
সাদা + কালো = ধূসর ।
সাদা
+ নীল = আকাশী।
সাত রঙের সমন্বয়ে সাদা।
দলে আলোচনা করে সংক্ষেপে নীচের বিষয় নিয়ে লেখো।
রামধনু :- রামধনু হল একটি দৃশ্যমান ধনুকাকৃতি আলোর রেখা যা বায়ুমণ্ডলে অবস্থিত জলকণায় সূর্যালোকের প্রতিফলন এবং প্রতিসরণের ফলে ঘটিত হয়। সাধারণত বৃষ্টির পর আকাশে সূর্যের বিপরীত দিকে রামধনু দেখা যায়। রামধনুতে সাতটি রঙের সমাহার দেখা যায়। দেখতে ধনুকের মতো বাঁকা হওয়ায় এটির নাম রংধনু।
বায়ুমণ্ডুল :- বায়ুমণ্ডল বলতে পৃথিবীর চারপাশে ঘিরে থাকা বিভিন্ন গ্যাস মিশ্রিত স্তরকে বোঝায়, যা পৃথিবী তার মধ্যাকর্ষণ শক্তি দ্বারা ধরে রাখে। একে আবহমণ্ডল-ও বলা হয়। এটি সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে পৃথিবীতে জীবের অস্তিত্ব রক্ষা করে।
বিজ্ঞানী :- একজন বিজ্ঞানী নির্দিষ্ট কোন কিছু পর্যবেক্ষণ করেন, প্রশ্ন করেন এবং ব্যাপক-বিস্তৃত পটভূমিতে গবেষণা কর্মের মাধ্যমে প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেন। বিজ্ঞানীরা বিশেষ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে যথাযথ জ্ঞান আহরণপূর্বক প্রকৃতি এবং সমাজের নানা মৌলিক বিধি ও গবেষণালব্ধ সাধারণ সত্য আবিষ্কারের চেষ্টা করেন।
গুহা :- গুহা হল প্রাকৃতিকভাবে নির্মিত ভূগর্ভস্থিত ফাঁপা অংশবিশেষ। স্পেলিওলজি বা ‘গুহাবিদ্যা’ অনুসারে কোনও ভূ-অভ্যন্তরস্থিত পাথরনির্মিত প্রাকৃতিক ফাঁপা অংশ যদি অন্তত মানুষের প্রবেশের উপযুক্ত বড় হয়, তবেই তাকে গুহা বলা হয়ে থাকে।
আদিম মানুষ :- আদিম মানুষ হাঁটতে পারত এবং দল বেঁধে থাকতো। অর্থাৎ এরা এপ এবং অস্ট্রালোপিথেকাস দের থেকে নিজেদের বিকাশ ঘটিয়েছিল। আগুনের ব্যবহার এরাও জানতো না, এরা ফলমূল ও কাঁচা মাংস খেত এবং পাথরকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতো ।
আবিষ্কার :- আবিষ্কার বলতে ব্যক্তি বা দলীয়ভাবে কোন নতুন ধরনের জিনিস, যন্ত্র বা বিষয় তৈরী, প্রযুক্তি উদ্ভাবন, প্রক্রিয়াকরণ ইত্যাদিকে বুঝায়। আধুনিককালের কম্পিউটারও একটি আবিষ্কার ছিল যখন তা প্রথম আবিষ্কৃত হয়েছিল। আবিষ্কার বলতে ব্যক্তি বা দলীয়ভাবে কোন নতুন ধরনের জিনিস, যন্ত্র বা বিষয় তৈরী, প্রযুক্তি উদ্ভাবন, প্রক্রিয়াকরণ ইত্যাদিকে বুঝায়।
আমরা সারাদিন চোখের সামনে বিভিন্ন রঙের অনেক জিনিস দেখতে পাই। রংভেদে সেসব জিনিসের একটি তালিকা প্রস্তুত করো।
সাদা | লাল | কালো | নীল | হলদে | সবুজ |
দুধ | রক্ত | চুল | আকাশ | হলুদ | পাতা |
Also Read – পাঠ- ৯ রচনা লেখার চাবিকাঠি পঞ্চম শ্রেণী