পেটুক দাসের স্বপ্ন

পেটুক দাসের স্বপ্ন কবিতার প্রশ্ন উত্তর, পাঠ- ৪

পেটুক দাসের স্বপ্ন কবিতার প্রশ্ন উত্তর, পাঠ- ৪, Class 5 Bengali Chapter 4, class 5 Bengali Assam,

‘পেটুক দাসের স্বপ্ন’ কবিতাটি গদ্যরূপে বলো।

উত্তরঃ- ‘পেটুক দাসের স্বপ্ন’ কবিতাটির গদ্যরূপ বা সারমর্ম : বালক গদাইচরণ বিকেল বেলা পড়তে বসে ভাবছে কী খেলে তার পেটটা ঠিক মতো ভরবে। সন্দেশ, রসগোল্লা, মুড়কি, গজা, কচ়ুরি কিংবা রাবড়ি, পায়েস পোলাও, লুচি প্রচুর খাবারের নাম গদাইচরণের মনে আসছে। কিন্তু কোনটা খেলে পেট সঠিকভাবে ভরবে চিন্তা করতে করতে ঘুম এসে গেল, আবেশে ঢুলে পড়ল।

গদাইচরণ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্নে দেখল সে একটি নতুন রাজ্যে এসে পড়েছে। সেই রাজ্যের ভূমি নতুন ধরনের। রাস্তাগুলি মোহনভোগ দিয়ে তৈরি, পথের ধারে গজার গাছে খাস্তা খাজা ঝুলছে। হাওয়ায় বুঁদের
গুঁড়ো উড়ছে, পথের কাঁকর মুড়কি, বরফিগুলো ইটের সারি, সুরকি সব মিহিদানা। গাছে গাছে ঝুলছে চন্দ্রপুলি, আস্‌কে, পাটি-সাপটা ঝড়ের ঝাপটা জোরে লাগলে ঝরে পড়ছে। নদীর ঘাট সন্দেশ দিয়ে বাঁধানো। নদীতে জলের বদলে দুধ বইছে। সরবতের ঝর্ণা ঝরছে। ক্ষীরের দীঘিতে লালপানতো পদ্ম ফুটছে। পথের পাতাগুলি ফুলকো লুচি, অনবরত কাঁপছে। নালা বিল সব দই পায়েসের স্রোতে ভরে রয়েছে। এত রকমের খাবার দেখে গদাইয়ের মন খুব খুশি। ভাবল আগে স্নান করে নিয়ে তারপর ইচ্ছামতো খাবার খেয়ে পেট ভরিয়ে নেবে। তাই স্নান করবার জন্য ক্ষীরের দীঘিতে পা দেওয়া মাত্রই একজন সেপাই এসে পেটুক দাসের সপ্নে কান ধরল। লাফিয়ে উঠে গদাইচরণ জেগে দেখল মাস্টার মশাই চোখ পাকিয়ে তার কান দুটি ধরে আছেন।

শব্দার্থ :

চক্ষু – চোখ
স্নান – চান
সেপাই – সিপাই
দিল – মন

ক – পাঠভিত্তিক

কখন, কোন প্রসঙ্গে নীচের কথাগুলো গদাইচরণ ভেবেছে?

(ক) ইচ্ছামতো খাবার খেয়ে ভরতে হবে পেটটা৷

উত্তরঃ- গদাইচরণ একদিন বিকেলবেলা পড়তে বসে ভাবছে কি খেতে পারলে তার পেট ঠিকমতো ভরবে। সন্দেশ, রসগোল্লা, গজা, কচুরি ইত্যাদি কোনটা খাবে ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুমের মধ্যে নানান খাবার তার স্বপ্নে দেখা দিল। গদাই স্বপ্ন দেখল যে, একটা নতুন রাজ্যে চলে এসেছে যেখানে শুধু খাবারের ছড়াছড়ি৷ চন্দ্রপুলি, পাটিসাপটা, মিহিদানা, মোহনভোগ, সরবতের ঝর্ণা, খাস্তা প্রভৃতি প্রচুর খাদ্যের সমাহার। সব দেখে শুনে খুশি গদাইচরণ ভাবল আগে স্নান সেরে তারপর ইচ্ছামতো খাবার খেয়ে পেট ভরাবে।

(খ) উচিত মতো ভরতে পারে পেটটা তাহার কী খেলে?

উত্তরঃ- পেটুক গদাইচরণ একদিন বিকেল বেলায় পড়তে বসেছে। পড়তে বসে শুধু খাওয়ার কথা চিন্তা করছে। ভাবছে কোন জিনিসটা খেতে পারলে গদাইচরণের পেট উচিত মতো ভরতে পারে।

নীচের শব্দগুলোর অর্থ শব্দ-সম্ভার থেকে খুঁজে নিয়ে লেখো।

শব্দ – অর্থ
আসকে – চালের গুঁড়ো দিয়ে ছাঁচে তৈরি পিঠে বিশেষ।
আবেশ – বিহ্বলতা, ভাবাবেগ।
ভূমি – ভূপৃষ্ঠ, মাটি।
ছানি – দৃষ্টির প্রতিবন্ধক নেত্ররোগ বিশেষ।
খাজা – ময়দার তৈরি মিঠাই বিশেষ।
সুরকি – পাকা ইমারত ইত্যাদি নির্মাণে ব্যবহৃত ইটের গুঁড়ো।
অবিশ্রান্ত – অক্লান্ত, বিরামহীন।

কবিতাটিতে যে যে খাদ্যবস্তুর নামের উল্লেখ আছে সেগুলোর একটি তালিকা তৈরি করো-

উত্তরঃ- সন্দেশ, রসগোল্লা, মুড়কি, গজা, কচুরি, রাবড়ি, পায়েস, পোলাও, লুচি, মোহনভোগ, খাজা খাস্তা, বদের গুঁড়ো, বরফি, মিহিদানা, চন্দ্রপুলি, আসকে, পাটি-সাপটা, দুধ, সরবত, ক্ষীর, লাল পানতো, ফুলকো লুচি, দই, পায়েস ইত্যাদি ।

উত্তর লেখো :

(ক) কী ভাবতে গিয়ে.গদাইচরণের তন্দ্রা এল?
উত্তরঃ- একদিন বিকেল বেলায় পড়তে বসে গদাইচরণ চিন্তা করতে লাগলো সন্দেশ, রসগোল্লা, যুড়কি, গজা কচুরি, রাবড়ি, পায়েস, পোলাও, লুচি কোনটা খেলে তার পেট ভর্তি হবে৷ অনেকরকম খাবারের কথা
মনে আসছে, কিন্তু কোনটা খাবে ঠিক করতে পারছে না। এইসব ভাবতে গিয়েই গদাইচরণের তন্দ্রা এল।

(খ) স্বপ্নে সে কোন রাজ্যে গিয়ে পৌছোলো?
উত্তরঃ- স্বপ্নে গদাইচরণ এক নতুন রাজ্যে পৌঁছোলো। সেই রাজ্যের ভূমিও নতুন রকম। বাড়ির সারি ছানা দিয়ে গাঁথা, রাস্তাগুলি মোহনভোগের তৈরি।

(গ) সেখানকার রাস্তা-ঘাট এবং ঘর-দুয়ার কীসের তৈরি?
উত্তরঃ- সেখানকার রাস্তা-ঘাট মোহনভোগ দিয়ে তৈরি এবং ঘর-দুয়ার ছানা দিয়ে গাঁথা।

(ঘ) চোখ খুলে সে কী দেখতে পেল?
উত্তরঃ- চোখ খুলে গদাইচরণ দেখল মাস্টার মশাই চোখ পাকিয়ে তার দিক তাকিয়ে কান দুটি ধরে আছেন।

শূন্যস্থান পূর্ণ করো। (পেটুক দাসের স্বপ্ন)

গাছে গাছে তন্দ্রপুলি, আসকে, পাটি-সাপটা –
পড়ছে ঝরে যেমনি জোরে লাগছে ঝড়ের ঝাপটা
সন্দেশেতে ঘাট বাঁধানো -দুধের নদী বয় রে –
সরবতেরি ঝরনা ঝরে -আর কোথা কি হয়রে

খ – ভাষা-অধ্যয়ন (ব্যবহারিক ব্যাকরণ)

‘কতরকম আসছে মনে- কোনটা যে ছাই খাবে সে’

এখানে ‘ছাই‘ শব্দটি পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবহার করলে অর্থ পালটে যাবে।

উদাহরণ – (ক) ঘরটি পুড়ে ছাই হয়ে গেল। (ভষ্ম হয়ে যাওয়া)

(খ) তুমি আসল কথা ছাই জানো। (কিছুই না জানা)

(গ) ও ছাই কেন খাচ্ছ? (অসার বা খারাপ জিনিস)

(ক) ছানিয়ে গাঁথা বাড়ির সারি -,
(খ) সন্দেশেতে ঘাট বাঁধানো-

বার ‘ছানি’ও ‘ঘাট’ শব্দ দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন অর্থ বুঝিয়ে তিনটি করে বাক্য রচনা করো।

ছানি

ক) (গোরুর জাব) – রোজ সকালে গোয়ালে গোরুর জাব দেওয়া হয়৷

খ) (চোখের তারার উপর আবরণীরূপ রোগবিশেষ) – রমানাথ বাবুর ছানি অপারেশন করা প্রয়োজন৷

গ) (মোমলা-মোকদ্দমা পুনর্বিচারের আবেদন) – রমেনবাবুর জমির মামলায় হেরে ছানির আবেদন করেছে৷

ঘাট

ক) (পুকুর, নদী প্রভৃতি জলাশয়ের অবতরণ স্থান) – মহিলারা ঘাটে স্নান করতে যায়।

খ) পর্বত (পূর্বঘাট, পশ্চিমঘাট) – আমাদের দেশে বহু ঘাট রয়েছে৷

গ) (সেতার, এসরাজ প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্রের সুরের পর্দা) উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত গায়কেরা এসরাজের ঘাট বাঁধছে।

দলে আলোচনা করে শব্দগুলোর পার্থক্য বুঝে বাক্য রচনা করো।

পদ্য (কবিতা) – আমি রবি ঠাকুরের পদ্য ভালোবাসি।

পদ্ম (ফুল বিশেষ) দূর্গাপূজায় পদ্মফুল লাগে।

ভজন (দেবতার মহিমা কীর্তন) – প্রতিদিন মন্দিরে ভজন গাওয়া হয়৷

ভোজন (খাওয়া-দাওয়া) পূজোর সময় সবাই মিলে ভালো ভোজন হয়৷

এসো, জানি।

‘অথবা কি রাবড়ি পায়েস পোলাও লুচি প্রচুরই’

ওপরের ‘অথবা’ শব্দের মতো আরও কিছু শব্দ আছে যেগুলোর কখনো রূপ পরিবর্তন হয় না। এধরনের শব্দে কোনো বিভক্তি যোগ হয় না কিন্তু বাক্যে ব্যবহৃত হয়। তাই সেগুলোকে পদ বলা হয়। সেরকম আরও পদ হল – তাই, বা, নতুবা, নাইবা, অথবা, কিন্তু, অথচ ইত্যাদি। এই পদগুলোকে অব্যয় পদ বলা হয়।

নৌকো থেকে উপযুক্ত অব্যয় পদ খুঁজে নিয়ে নীচের বাক্যগুলো সম্পূর্ণ করো।

এবং, ও, কিন্তু, তাই, কেন, কী, অথবা কিংবা

(ক) রমলা …………বহিমলা দুই বান্ধবী।
উত্তরঃ- রমলা ও রহিমলা দুই বান্ধবী।

(খ) বিদ্যাই পরম ধন। ……… মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করবে।
উত্তরঃ- বিদ্যাই পরম ধন। তাই মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করবে।

(গ) একটি ঘর …………. চেয়ারের ছবি আঁকো।
উত্তর। একটি ঘর অথবা চেয়ারের ছবি আঁকো।

ঘ) মেয়েটি দেখতে সুন্দরী ……….. বিদ্যাহীন।
উত্তরঃ- মেয়েটি দেখতে সুন্দরী কিন্ত বিদ্যাহীন৷

(ঙ) আমি আজ খেলতে যাব না; ………কাল আমার পরীক্ষা হবে।
উত্তরঃ- আমি আজ খেলতে যাব না; এবং কাল পরীক্ষা হবে।

গ-জ্ঞান সম্প্রসারণ

এসো, দলে আলোচনা করে লিখি।

(ক) তোমাদের ঘরে উৎসব পার্বণে কী কী খাবার জিনিস তৈরি করা হয়?
উত্তরঃ- উৎসব পার্বণে পায়েস, পিঠে, তালের বড়া, নারকেল নাড়ু, মুড়িমোয়া, লুচি, পান্তুয়া, মিহিদানা, আলুর দম, খিচুড়ি, ছানার মিষ্টি, পোলাও, বিরিয়ানি প্রভৃতি।

(খ) কবিতায় যে খাবার জিনিসের নাম আছে সেগুলো ছাড়া তোমরা আর কী কী খাবার জিনিসের নাম জানো?

উত্তরঃ- সিঙ্গারা, ইডলি, ধোয়ায়া, গুলাব জাম, ফ্রায়েড রাইস, কেক, পেস্ট্রি, মোগলাই পরোটা, পনির, ছানার চপ, ফুচকা, চানাচুর, চপ, কাটলেট, এগরোল প্রভৃতি।

(গ) তোমার পছন্দের খাবার জিনিসের ছবি খাতায় এঁকে নীচে নাম লেখো।
উত্তর। নিজেরা চেষ্টা করো।

এসো, সবাই মিলে বিমল ঘোষের রচিত ‘যদি হয়‘ কবিতাটি আবৃত্তি করি।

কুমড়ো যদি ধুমড়ো দেহে জ্যান্ত হয়ে নড়ে,
ঝুড়ির থেকে লাফিয়ে উঠে আমার ঘাড়ে পড়ে।
শশা যদি মশাল জ্বেলে ডাকাত হয়ে ওঠে,
মায়ের গায়ের গয়না নিয়ে পুকুরপাড়ে ছোটে।
বেগুন যদি আগুন পোয়ায় উনুন-ধারে বসে,
তেল নিয়ে তার কালো দেহে মালিশ করে কষে।
লংকা যদি ডঙ্কা বাজায় করতালটি পেটে,
ল্যাজ করে তার বোঁটাটিকে এগিয়ে আসে হেঁটে।
খাটে শুয়ে আমি ভাবি এসব যদি হয়!
এমন সময় টিকটিকিটা ঠিক ঠিক কয়।

ঘ- প্রকল্প

যে কোনো একপ্রকার নাড়ু বা পিঠার প্রস্তুত প্রণালী বড়োদের জিজ্ঞেস করে নিজের খাতায় লেখো।

উত্তরঃ- নারকেল নাড়ু – নারকেল ভালো ভাবে কুরিয়ে চিনি কিংবা গুড় দিয়ে জাল দিতে হয়। তারপর হাতের তালুতে বিভিন্ন আকারের নাড়ু গোল করে পাকাতে হয়।

আরোও পাঠ- ৩ ‘ দেবারতির আবেদন ‘

error: Content is protected !!